জহিরুল ইসলাম জহির।। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুশ্চিতে ‘বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি এনজিও ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এনজিওটির ভুশ্চি দক্ষিণ বাজারস্থ কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক গ্রাহক ঋণের টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে জানতে পারেন অফিসের কর্মকর্তারা পালিয়েছেন। গ্রাহকদের বেশিরভাগই নারী। পরে গ্রাহকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর কার্যালয় ও থানায় যান। ঋণ বহি ও অফিসের সামনের দেয়ালে সাঁটানো ব্যানারে এনজিওটির প্রধান কার্যালয়-মতিঝিল ১০৫/৪, ঢাকা-১০০০ এবং রেজি: নং ৪০২/১৯৯৫ উল্লেখ রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্থানীয় গোষাইপুষ্করনী গ্রামের অটো রিকশা চালক জসিম উদ্দিন বলেন, গত রবিবার আমাদের গ্রামের আবদুর রহমানের বাড়িতে বন্ধনের ব্যবস্থাপক পরিচয়ে নাদিম হাসান ও একজন নারী কর্মকর্তা আসেন। তারা আমাদের বলেন মাত্র ৪জনকে সদস্য করবো। এক হাজার টাকা করে জমা দিয়ে সদস্য হতে হবে। সদস্যরা যতটাকা ঋণ নিবে তার ১০ ভাগ টাকা বন্ধনে অগ্রিম জমা রাখতে হবে। তাদের কথা শুনে আমি, আমার গ্রামের কৃষক বাবুলসহ ৪জন সদস্য হই। আমি ৪লক্ষ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করি। বাবুল ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য আবেদন করে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টায় বন্ধনের লোকেরা গ্রামে এসে আমার থেকে ৪০ হাজার টাকা ও বাবুল থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়। তারা বলেছে সকাল ১০টায় ভুশ্চি বাজার অফিস থেকে আমাদের ঋণ দিবে। সেখানে গিয়ে দেখি অফিসে কেউ নেই। বরং আমাদের গ্রাম ছাড়াও ছোটতুলা, কলমিয়া, ভৈরবপুর, জামুয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের অস্বচ্ছল নারী পুরুষদের ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক নারী গ্রাহক অফিসের সামনে এসে টাকার জন্য কান্না করেছে।
বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ভাড়াকৃত অফিসটির মালিক আলেক হোসেন বলেন, আমার ঘরটি আবাসিক হিসেবে ভাড়া দিতে নির্মাণ করেছিলাম। কিন্তু গত রবিবার বন্ধনের ব্যবস্থাপক পরিচয়ে জাহিদ নামের একজন আমার অফিসটি ভাড়া নিয়েছিল। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ার মধ্যে আমাকে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল পরের রবিবার চুক্তি করে বাকী টাকা ও এক বছরের ভাড়া অগ্রিম দিবে। মাত্র ৫দিনের ব্যবধানে তারা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে অনেক টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে। অফিসে কয়েকটি টেবিল ও কিছু চেয়ার রয়েছে। অফিসটি আমি তালা লাগিয়ে দিয়েছি।
ভুক্তভোগী ও ঘর মালিকের দেয়া বন্ধনের দুজন কর্মকর্তা নাদিম হাসান (০১৯৭৩-৩৫৬১৫৪) ও জাহিদ ০১৬১৬-১৭১৩৫৬) কে উল্লেখিত নাম্বারে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে ফোন করলে নাম্বার দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুশ্চি বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মজুমদার লিটন বলেন, ঘর মালিক আমাদেরকে অবগত না করে এনজিও প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে। চুক্তিপত্র না করে অফিস ভাড়া দিয়ে থাকলে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও এর দায় ঘর মালিক এড়াতে পারেন না ।
ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার ইউনিয়নের কলমিয়া গ্রামের একজন নারী আমাকে জানিয়েছেন ‘বন্ধন’ নামের একটি এনজিও তার কাছ থেকে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা জমা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমি তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এগুলো ডকুমেন্টারী বিষয়। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।