স্টাফ রিপোর্টার।। মানুষের মৃত্যুজনিত ঝুঁকি, ক্ষতি, বিপদ হস্তান্তর বা এড়ানোর একটি কৌশল হলো জীবন বীমা । বীমাগ্রহীতার মৃত্যু অথবা বার্ধক্য অবস্থায় বীমাগ্রহীতা অথবা তার পরিবার পরিজনদের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আধুনিক যুগে জীবন বীমা একটি কার্যকর মাধ্যম। অথচ মৃত্যুর ৪ বছরেও বীমা দাবী পায়নি প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এর গ্রাহক, কুমিল্লার লালমাই উপজেলার চৌকনন্দী গ্রামের মরহুম নজরুল ইসলামের পরিবার।
বীমা গ্রাহকের পরিবার ও প্রাইম ইন্সুরেন্সের বাগমারা জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের চৌকনন্দী গ্রামের মরহুম টুকু মিয়ার ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামের বাবুল হজুরের (প্রাইম ইন্সুরেন্সের কর্মী) অনুরোধে ২০১২ সালে প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের বাগমারা জোনাল অফিসে গিয়ে ১৬ লক্ষ টাকার একটি জীবন বীমা (পলিসি নং ৯১৮৫০০২৯১৬২) চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যার বাৎসরিক প্রিমিয়াম ছিল ১লক্ষ ৩৬ হাজার ৫শ ৩৩ টাকা। কোম্পানী বীমাটি গ্রহন করে বীমা দলিল গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করেন। বীমা গ্রাহক প্রবাসে থাকায় প্রতি বছর লোকমারফত প্রিমিয়াম জমা দিতেন। ২০১৪ সালে বীমা অফিসের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার বীমাটি লেফস হয়ে গেছে। এরপর ২০১৬ সালের মে মাসে নজরুল ইসলাম দেশে ফিরে প্রাইমের বাগমারা অফিসে যান এবং লেফস এর কারন ও করণীয় জানতে চান। সেই সময় বাগমারা জোনাল অফিসের ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন নতুন একটি বীমা করতে অনুরোধ করলে নজরুল ইসলাম ১৬ লক্ষ টাকার আরেকটি বীমা চুক্তি করেন। যাবতীয় কাজ শেষে ১লক্ষ ৩৬ হাজার ৫শ ৩৩ টাকা প্রিমিয়াম জমা দিয়ে নজরুল ইসলাম মালয়েশিয়া ফিরে যান। কয়েকমাস পর তিনি অনলাইনে দেখেন কোম্পানী তার নতুন বীমাটি গ্রহন করেছে। যার পলিসি নং ৯১৮০০০৫৭২০৬। প্রতি বছর প্রিমিয়াম জমার শেষ তারিখ ২৮ মে।
কিন্তু ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল কর্মরত অবস্থায় অসুস্থতাজনিত কারনে নজরুল ইসলাম মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। বিষয়টি তাৎক্ষনিক প্রাইম ইন্সুরেন্সের বাগমারা অফিসের ইনচার্জ কামাল হোসেনকে জানায় নজরুলের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার। ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ এয়ার লাইনসের এমএইচ-১৯৬ নং বিমানে নজরুলের (পাসপোর্ট নং বিসি-০৮০১৮৬৪) লাশ দেশে এনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
পরবর্তীতে মৃত্যু দাবী আদায়ের জন্য নজরুলের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাগমারা অফিসের মাধ্যমে কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দুই দফায় আবেদন করেন। কিন্তু মৃত্যুর সাড়ে ৩ বছরেও গ্রাহকের পরিবার বীমা দাবী পায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি বীমা কোম্পানীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু কোম্পানী বীমাটি গ্রহন করেছে এবং ২য় কিস্তি পরিশোধের পূর্বেই গ্রাহক ইন্তেকাল করেছেন, সেহেতু গ্রাহকের নমিনি বীমা দাবী প্রাপ্য। প্রাইম বীমা দাবীটি না দিলে গ্রাহকরা বীমা কোম্পানীর প্রতি আস্থা হারাবে। সাধারণ মানুষ বীমা বিমুখ হবে। এতে অন্যান্য কোম্পানীও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বীমা গ্রাহক নজরুল ইসলামের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বলেন, প্রথম বীমাটির অন্তত জমাকৃত প্রিমিয়াম এবং ২য় বীমাটির মৃত্যু দাবী আদায়ে প্রয়োজনে প্রাইম ইন্সুরেন্সের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করবো। আমি দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।
প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের বাগমারা জোনাল অফিসের ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন বলেন, গ্রাহকের পক্ষে আমি দাবী আদায়ে প্রায় ৪ বছর ধরে চেষ্টা করছি। দাবী পরিশোধ করবে কি করবে না এটা কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের হাত নেই।
লালমাই উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ১লা মার্চ বীমা দিবস। বীমা দিবসে বীমা গ্রাহকের ন্যায্য দাবী আদায় হোক এই প্রত্যাশা করছি।
৪ বছরেও মৃত্যু দাবি পায়নি লালমাইয়ের নজরুলের পরিবার
প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্স লিঃ