স্টাফ রিপোর্টার || ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার লালমাই উপজেলার শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ‘বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়’ ২০২১ সালের প্রথম প্রহরে একশ বছর পূর্ণ করবে। জ্ঞানে, প্রতিষ্ঠায় এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা সমাজের বহুদিক আলোকিত করেছেন। রাজনীতি, ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে।
শত বছর পূর্তি উদ্যাপন ছাড়াও শতবর্ষে বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে বিদ্যালয়ের হলরুমে- শিক্ষার অগ্রগতি, মূল্যায়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই দাবিতে ঐক্যমত হয়েছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও লালমাই উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবদুল মোতালেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রীর এপিএস কেএম সিংহ রতন, লালমাই সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মমিন মজুমদার, ক্যাশিয়ার শফিকুর রহমান, বাগমারা উত্তর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, বাগমারা দক্ষিণ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন ও বাগমারা উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান লিওন। এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন বাগমারা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ও লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আয়াতুল্লাহ প্রমুখ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম সওদাগর, বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির আহমেদ, লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী মেহেদী হাসান বাপ্পী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য হারুনুর রশিদ, শিক্ষক প্রতিনিধি খলিলুর রহমান, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয় শর্মা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আবদুল মতিন লিটন, লালমাই উপজেলা যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ভ্টুু, বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কাউছার মোর্শেদ, যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মোহন, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাছির মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সভার শুরুতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এমপির পক্ষে তাঁর প্রতিনিধি আবদুল মোতালেব গত দু’বছরের সফলতা তুলে ধরেন। সাফল্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন, দূর্বল শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে অতিরিক্ত পাঠদানের ব্যবস্থা, মাসিক পরীক্ষা, জেএসসি ও এসএসসি’র অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে ফরম ফিলাপে সুপারিশ না করা, বাগমারা স্কুলের প্রাক্তন ইংরেজী শিক্ষক আবদুল মান্নান স্যারকে খন্ডকালীন নিয়োগ, শিক্ষক গ্রুপিং নিরসন, স্কুলের প্রবেশ পথে হকার উচ্ছেদ, স্কুলের উত্তর দিকের পুকুরের উপর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, স্কুলের সৌন্দর্য্য বর্ধনে স্কুলের দক্ষিণ পাশের মার্কেট ভেঙ্গে বাউন্ডারী নির্মাণ, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি, বাগমারা শিশু নিকেতন থেকে স্কুলের জায়গা উদ্ধার করে ক্লাস চালু করা, শ্রেণি কক্ষের জন্য ফার্নিচার তৈরি, স্কুলের অবহৃত ছাত্রাবাস ভাড়া দিয়ে আয় বৃদ্ধি, পুকুর লিজ দিয়ে আয় বৃদ্ধি, স্কুলের পশ্চিম পাশের পরিত্যক্ত টয়লেট ব্যবহার উপযোগী করা, দক্ষিণ পাশের ছাত্রাবাসের অব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার উপযোগী করা, রেলওয়ে থেকে প্রাপ্য টাকা উত্তোলনে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা ও বাগমারা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান থেকে ১লক্ষ টাকার অনুদান গ্রহনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
ক্যাশিয়ার শফিকুর রহমান বলেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলে হবে না, শিক্ষার মান উন্নয়ন করে প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রদক্ষেপ নিতে হবে। শতবর্ষে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণ করতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের ডেপুটি কন্ট্রোলার (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সাথে সমন্বয় করে একটি শিক্ষা উন্নয়ন কমিটি গঠন করতে হবে।
লালমাই সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মমিন মজুমদার বলেন, বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে একত্র করে জাতীয়করণ করতে আমরা ইতিমধ্যে কিছু কাজ করেছি। শিক্ষাবোর্ডের ডেপুটি কন্ট্রোলার শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে একটি রেজুলেশন লিখতে হবে। এরপর মন্ত্রী মহোদয় সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব। আমি বিশ্বাস করি এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমাদের সকলের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়’ শতবর্ষেই সরকারি হবে।
অর্থমন্ত্রীর এপিএস কেএম সিংহ রতন বলেন, বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় আমার প্রাণের বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যালয়কে সরকারি করতে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমার যা কিছু করা প্রয়োজন আমি করব।
এদিকে শতবর্ষ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার কে আহবায়ক ও ব্যবসায়ী মো: কামাল হোসেন কে সদস্য সচিব করে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি অর্থমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে অন্যান্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করে শীঘ্রই কাজ করবে।