লালমাইয়ে ৬৭ স্কুলে এডহক কমিটি 

209

স্টাফ রিপোর্টার ।। নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৭ মাসেও এসএমসি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ২০১৭ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় লালমাই উপজেলার ৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২২ মার্চ উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহানারা খানম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সকল প্রধান শিক্ষককে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নীতিমালার ২.১০.১ ধারা মোতাবেক এডহক কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী লালমাই উপজেলায় কর্মরত দুই জন উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে ৬৬টি স্কুলের এডহক কমিটির আহবায়ক করতে হবে । এদিকে বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ভুশ্চি সমবায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমান ৪বছর ধরে এডহক কমিটি চলমান রয়েছে। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী এডহক কমিটির মেয়াদ ৬ মাসের বেশি থাকার সুযোগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় থাকাকালীন ২০১৭ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান লালমাই উপজেলার ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি অনুমোদন করা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সবকয়টি বিদ্যালয়ের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। নীতিমালায় বলা আছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস পূর্বেই পরবর্তী কমিটি গঠনের জন্য প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। নীতিমালা অনুযায়ী এসএমসি গঠনকল্পে ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর ৬৭টি স্কুলে তফসিল ঘোষনা করেন দুই ক্লাস্টারের দুজন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তফসিলে উল্লেখ- ছিল ১০ অক্টোবর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২০ অক্টোবর খসড়া ভোটার তালিকার উপর আপত্তি গ্রহন ও নিষ্পত্তি, ২১ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুমোদন ও প্রকাশ, ২২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিতরণ, ২৬ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা, ২৭ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বাছাই, ২৮ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৯ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ৩১ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দ এবং ৬ নভেম্বর নির্বাচন (ভোট গ্রহন)। অবশ্য নির্বাচন ছাড়াই সবকয়টি বিদ্যালয়ে প্রস্তাব সমর্থনের ভিত্তিতে ৪জন করে অভিভাবক সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। পরে বিদ্যোৎসাহী সদস্য অনুমোদনের জন্য ৩জন পুরুষ ও ৩জন নারীর নাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রস্তাব পাঠান প্রধান শিক্ষকরা। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা কমিটি স্থানীয় এমপির পরামর্শে ২জন পুরুষ ও ২জন নারী বিদ্যোৎসাহী সদস্য চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় ১৬ মাসেও উপজেলা শিক্ষা কমিটি বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। সে কারনে কোন স্কুলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি।
গত ১৫ মার্চ লালমাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে শিক্ষা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহানারা খানম ছাড়াও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর নির্বাচনী নোটিশ দেয়া হলেও দীর্ঘ ১৭ মাসেও কমিটি গঠন না হওয়ায় ও চলমান কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ায় প্রজ্ঞাপন অনুসারে সর্বস্মতিক্রমে ২.১০.১ ধারা মোতাবেক এডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লার অন্য একটি উপজেলায় কর্মরত সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নে স্থানীয় এমপির পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। অনুমোদন নয়। পরামর্শ মানেই হলো এমপি বা তাঁর প্রতিনিধি বিদ্যোৎসাহীর বিষয়ে মনোনয়ন দিবেন। এখানে প্রতিনিধি বলতে এমপি মনোনীত কাউকে বুঝানো হয়েছে। যেমন-কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় এমপির প্রতিনিধি হলেন এমপির ছোট ভাই ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার। তেমনি লালমাই ও নাঙ্গলকোটেও এমপিন একজন মনোনীত প্রতিনিধি রয়েছেন।

দুতিয়াপুর হাজী বাবরু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলে উদ্দিন বলেন, শুধু আমার স্কুল নয়, উপজেলার সকল স্কুলেই এডহক কমিটি হচ্ছে।

উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ইব্রাহিম খলিল বলেন, আগের কমিটির মেয়াদ শেষ। ২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষকরা একটি কমিটি জমা দিয়েছিল। কিন্তু বিদ্যোৎসাহী সদস্য চূড়ান্ত না হওয়ায় গত শিক্ষা কমিটির সভায় সকল স্কুলে এডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, এডহক কমিটি অনুমোদন হলে যতদ্রুত সম্ভব আমরা এসএমসি গঠনের উদ্যোগ নেব।

লালমাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহানারা খানম বলেন, নিয়ম রয়েছে ১১ সদস্যের কমিটি গঠনের। কিন্তু বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষকই পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়নি। তাই শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে এডহক কমিটি করা হচ্ছে। ১৭ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারার দায় কার ? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিটি গঠন করার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকদের। গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন দু’জন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এটা আমি দেখিনা।

লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি আবদুল মালেক বলেন, পুরোনো কমিটির মেয়াদ নেই। নতুন কমিটি গঠন হলেও বিশেষ কারনে (কারনটি তিনি প্রতিবেদকের কাছে উল্লেখ করলেও পত্রিকায় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন) অনুমোদন হয়নি। তাই গত শিক্ষা কমিটির সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সকল বিদ্যালয়ে এডহক কমিটি গঠন করবো ।