লালমাইয়ে ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্যসেবা চালুর দাবি জানালেন ওসি আইয়ুব

742

স্টাফ রিপোর্টার  ।।   করোনাকালে লালমাই উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটিকে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব। ১৪ জুন রবিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় তিনি এই অনুরোধ জানান। ওই সময় তিনি বলেন, লালমাই উপজেলার আড়াই লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। উপজেলার একমাত্র চিকিৎসালয় বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতাল দুপুর ২টায় বন্ধ হয়ে যায়। এখানকার কেউ দুপুরের পর অসুস্থ হলে চিকিৎসা সেবা পায় না। চিকিৎসার জন্য অসুস্থ লোকটিকে হয় লাকসাম, না হয় কুমিল্লা যেতে হয়।

২০০৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ১ম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এরপর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এমপির উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম আনুষ্ঠানিকভাবে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটির আইটডোর সার্ভিস উদ্বোধন করেন। ওই সময় জনদাবীর মুখে তিনি শীঘ্রই ইনডোর সার্ভিস চালুসহ হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন।

উদ্বোধনী দিন থেকে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র সার্জারী কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র গাইনি কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র এনেস্থেসিয়া কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও ৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ মোট ২৩ জনের জনবল নিয়ে আউটডোর কার্যক্রম শুরু করলেও হাসপাতালটিতে দীর্ঘ ৩বছরে ইনডোর সেবা চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ইনডোর চালু না থাকার অজুহাতে হাসপাতালটিতে ২৪ ঘন্টার জরুরী চিকিৎসা সেবাও বন্ধ রয়েছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইয়াসির আরাফাতের তৎপরতায় কুমিল্লার সিভিল সার্জন এক আদেশে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের আরএমও ডাঃ জয়াশীষ রায় কে লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেন। তবে আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ইউএইচএন্ডএফপিও এর কাছে থাকায় সিভিল সার্জনের এই আদেশেও লালমাইয়ের স্বাস্থ্য সেবায় কোন পরিবর্তন আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন বাগমারা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও একজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে। বর্তমানে মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্টের পদ খালি। ভবন না থাকায় অন্যরা ২০ শয্যা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।

পেরুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এবং বেলঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন রয়েছে। এদের মধ্যে পেরুলের সহকারী সার্জন ও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এবং বেলঘরের সহকারী সার্জন ২০ শয্যা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। বেলঘরের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ভুশ্চি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন।

বাকই (উত্তর) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন রয়েছে। ওরা দু’জনেই লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে বাকই উত্তরের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বর্তমানে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়াও একজন সার্জারী কনসালটেন্ট, একজন গাইনি কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার, দুই জন সহকারী সার্জন, ৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, দুই জন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ মোট ১৮জন কর্মরত রয়েছেন।

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা জরুরী স্বাস্থ্য সেবা চালু করতে গত ২০ মার্চ আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সর্বশেষ ১৪ জুন রবিবার ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য সেবা চালুর জোর দাবী জানিয়েছি। আমার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয় তাৎক্ষনিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জন মহোদয়কে অনুরোধ করেছেন।