লালমাই বার্তা ডেস্ক ।। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের মত কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হতদরিদ্রদের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এই খাদ্য সংকট মেটাতে অর্থমন্ত্রী, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ এগিয়ে এসেছেন। উপজেলা প্রশাসনের হটলাইনে এসএমএস করে খাদ্য সংগ্রহ করেছেন অনেক কর্মহীন, মধ্যবিত্ত ও প্রবাসী পরিবার। অর্থ সংকটে পড়া আলেমদের খাদ্য সহায়তা করেছেন লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইয়াছির আরাফাত। পুলিশও খাদ্য সহায়তায় পিছিয়ে নেই। লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব নিজের বেতনের টাকায় গোপনে অনেক শ্রমজীবি ও প্রবাসীর পরিবারে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন। বাগমারা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৬ হাজার পরিবারে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে এসেছেন। উপজেলার দুইজন নারী সমাজসেবী খাদ্য সংকট মেটাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধমে হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তাদের একজন খন্দকার নাজমুন্নাহার নুপুর। উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের দোশারীচোঁ গ্রামের খন্দকার মো: নেয়ামত উল্যাহ’র বড় কন্যা। পেশায় বুটিকস ও পার্লার ব্যবসায়ী। নুপুর নারী কল্যাণ সমিতি নামে লাকসামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন করেছেন। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে নারী ও শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই নারী সমাজসেবী নিজ গ্রামে রয়েছেন। গ্রামবাসীর কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করেছেন সামাজিক সংগঠন ‘রৌদ্রছায়া ’। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ১৫জন। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেই কাউন্সিলিং করেছেন। গত ১৭ এপ্রিল দোশারীচোঁ গ্রামের ঢাকা ফেরত একজন নারী ও তার মেয়েকে হোম কোয়ারেন্টাইন এর ব্যবস্থা করেছেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় টানা ১৪ দিন সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তাও করেছেন। সংগঠনের জন্য বড় কোন ফান্ড তৈরি করতে না পারলেও নিজেদের ক্ষুদ্র অনুদানে রৌদ্রছায়ার উদ্যোগে খন্দকার নুপুর ১৬ মে পর্যন্ত গ্রামের ২৫টি হতদরিদ্র পরিবারে খাদ্য সহায়তা করেছেন। ঈদের আগে আরো অন্তত ২৫টি পরিবারে খাদ্য পৌঁছাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। রৌদ্রছায়ার সদস্যরা হলো: খন্দকার নাজমুন্নাহার নুপুর, মো: হান্নান, জান্নাতুল ফেরদৌস কারিনা, মো: ইউছুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, রাশেদুল ইসলাম, মো: মহসিন, মারুপ হোসেন, নূরে আলম, মাজহারুল ইসলাম রিয়াজ, হাছিনা আক্তার, রবিউল হোসেন মীম, মো: ইমন হোসেন।
আরেকজন সালমা আক্তার সাথী। লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের সন্তান। কুমিল্লাস্থ কোটবাড়ী শহীদ স্মৃতি আরপি ম্যাটস এ ৩য় বর্ষে পড়ছেন। পাশাপাশি নিজেকে সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেছেন। অসহায় ও দুস্থদের কল্যাণে কাজ করতে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেছেন সামাজিক সংগঠন ‘মানবতার বন্ধন’।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত একবছরে অনেক হতদরিদ্র পরিবার সহায়তা পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন ও হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সালমা আক্তার সাথী ও তার সংগঠন। নিজেদের ক্ষুদ্র অনুদানে এই পর্যন্ত ২০টি পরিবারকে নগদ ৫শ টাকা করে দিয়েছেন। কয়েয়কটি পরিবারে খাদ্য সামগ্রীও দিয়েছেন।
লালমাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: কামাল হোসেন বলেন, করোনাকালে হতদরিদ্রদের জন্য নুপুর খন্দকার ও সালমা আক্তার সাথীর এই খাদ্য সহায়তাকে লালমাইবাসী মনে রাখবে। প্রতিটি গ্রামেই এমন নারী সমাজসেবী রয়েছেন। তাদেরকেও এভাবে এগিয়ে আসতে হবে।