লালমাইয়ে ইউপি মেম্বারের হাতে কৃষক খুন

320

জহিরুল ইসলাম জহির ।। নিজের মেয়ের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ইউপি মেম্বারের হাতে খুন হলেন কৃষক পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ইছাপুরা গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের কৃষক আমান উল্যাহ’র (৭০) এসএসসি পরীক্ষার্থী কন্যাকে কিছুদিন ধরে ইভটিজিং করে আসছে বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের ছোট ভাই কাঠমিস্ত্রী সোহরাব।
গত ১৬ এপ্রিল রাত অনুমান ১১টায় সোহরাব আমান উল্যাহ’র বাড়ীতে গিয়ে তার মেয়েকে ডাকাডাকি শুরু করে। এসময় আমান উল্যাহ ও তার ছেলেরা চোর চোর বলে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ীর লোকজন বেরিয়ে আসে। রাতের অন্ধকারে লাইট দিয়ে খোঁজতে গিয়ে সবাই দেখে সোহরাব বাড়ীর পাশের ধান ক্ষেতে শুয়ে আছে। এসময় ক্ষুব্ধ জনতা তাকে ধরে উত্তম মধ্যম দেয়।

এখবর পেয়ে সোহরাবের ভাই দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে ১০/১২জন সন্ত্রাসী রাত সাড়ে ১২টার পর আমান উল্যাহর’র বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুর করে। তখন অবশ্য বাড়ীতে পুরুষ বলতে কেউ ছিলনা। হামলা করতে আসতেছে শুনে সবাই এর আগেই বাড়ী ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।

পরদিন ১৭ এপ্রিল দুপুরে গ্রামের গণ্যমাণ্যদের আশ্বাসে আমান উল্যাহ বাড়ীতে ফিরে আসে। বিষয়টি জানতে পেরে দুপুর অনুমান ২.৩০টায় দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে তার ভাইয়েরাসহ কয়েকজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী আমান উল্যাহ কে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যায়। ঘর থেকে বের করার সময় দেলোয়ার মেম্বার আমান উল্যাহকে মাটিতে আঁছড়ে দেয়। এরপর সবাই মিলে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে ইছাপুরা গ্রামের শহীদের বাড়ীর সংলগ্ন সড়কের পাশে ফেলে দেয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে তাকে শাকেরা বাজারের পল্লী চিকিৎসক শাহজাহানের কাছে নেয়। এরপর লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এঘটনায় আমান উল্যাহ’র ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ১৭ এপ্রিল বিকালে দেলোয়ার মেম্বারসহ এজাহারভুক্ত ৪জন ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে হত্যা চেষ্টা, ভাংচুর, চুরি ও মারপিটের ঘটনায় একটি মামলা (নং ২, তাং ১৭/০৪/২০২০ইং) দায়ের করে। অভিযোগের পরপরই পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে।

এদিকে ১৮ এপ্রিল শনিবার বেলা অনুমান ১০ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমান উল্যাহ মারা যায়। খবর পেয়ে শনিবার বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রশান্ত পাল ও লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব। এসময় উপস্থিত ছিলেন লালমাই থানাধীন ভুশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, বেলঘর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মজুমদার, বেলঘর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় লালমাই থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সনাক্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ইছাপুরা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল ও আজগর আলীর ছেলে রবিউলকে আটক করে।
নিহতের ছেলে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, সোহরাবের চরিত্র খারাপ হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে সে আমার বোনকে নিয়মিত ইভটিজিং করে আসছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনি দেলুসহ তার ভাইদের গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই।

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নিহতের ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ১৭ এপ্রিল বিকালে লালমাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ১৮ এপ্রিল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা শাহবাগ থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি এবং দায়েরকৃত মামলায় ৩০২ ধারা সংযুক্তের জন্য আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করি। এখন পর্যন্ত ২জনকে আটক করেছি। ইউপি মেম্বার দেলোয়ারসহ বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।