ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

31

মো: কামাল হোসেন: মিথ্যা বিল-ভাউচার তৈরি করে কলেজ কোষাগার থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গত বৃহস্পতিবার দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাৎ এই মামলা করেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান।
মামলার আসামিরা হলেন, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সাবেক হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর কাজী জাহাঙ্গীর আলম। তাদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৪৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিভিন্ন খাতভিত্তিক আর্থিক আয়-ব্যয় নির্বাহ করা হয়। নিজেদের মধ্যে যোগসাজস করে ভুয়া বিল তৈরির মাধ্যমে এসব হিসাব থেকে অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, আব্দুল হান্নান এবং কাজী জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৯০৭ টাকা আত্মসাৎ করেন।
ঘটনার বিবরণে এজাহারে বলা হয়েছে, অধ্যাপক রতন কুমার সাহা ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। এসময় আগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের কাছ থেকে কলেজের ৪৪টি ব্যাংক হিসাবের মোট স্থিতি ৭ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭২৮ টাকা বুঝে নেন।
রতন কুমার সাহা দায়িত্বে থাকার সময় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৯ সালের ৩ মে তাকে ওএসডি করা হয়।
এরপর একই বছরের ১১ জুন পরবর্তী অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া। তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন কলেজের ব্যাংক হিসাবগুলোর স্থিতি ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৬ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের পাঁচ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরীক্ষা তহবিল, উন্নয়ন তহবিল, ল্যাবরেটরি তহবিল, অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী তহবিলসহ উল্লেখযোগ্য ২২টি খাতের আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, এগুলোতে বিল-ভাউচার নেই। এমনকি কোথাও কোথাও ব্যয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কমিটির রিকুইজিশনও ছিল না।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির এই প্রতিবেদনে অধ্যাপক রতন কুমার সাহার কর্মকালীন বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও আত্মসাতের প্রমাণ তুলে ধরা হয়। আত্মসাতের প্রমাণ মেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর আরেকটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও।
এরপর অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ২ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার ৯০০ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা করা হয় বলে জানান দুদকের কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।