বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হলো পরিত্যক্ত ঘরে!

361

স্টাফ রিপোর্টার ।।  লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের পালপাড়ার তোরাব আলী কবিরাজ বার্ধক্যজনিত কারনে আনুমানিক ৩ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ে রেখে গেছেন।

১ম স্ত্রী শাহারা বানুর (৮০) খোকন মিয়া, রেজিয়া বেগম, মাফিয়া বেগম, জাহানারা বেগম, তাহেরা বেগম ও ময়ুরি বেগম নামের ৬ সন্তান রয়েছে। মেয়েদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে খোকন মিয়া কৃষি কাজ করেন।

২য় স্ত্রী লালমতির নেছার (৬০) খোরশেদ আলম, জসিম উদ্দিন ও রেহেনা বেগম নামের ৩ সন্তান রয়েছে। তোরাব আলীর মৃত্যুর পর পৈত্রিক কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন খোরশেদ আলম। জসিম উদ্দিন মাল্টিপাস কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। রেহেনা বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে।
কথা ছিল পৈত্রিক কবিরাজি ব্যবসা করে খোরশেদ আলম দুই মাকে ভরণ পোষন দিবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। কবিরাজি ব্যবসা করে গ্রামের পাকাসড়কের পাশে ৩ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ী করেছেন। নিচ তলার কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। ২য় তলা নির্মানাধীন।

ছেলে যখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ীতে বসবাস করছেন তখন তাদেরই বৃদ্ধা মায়েদের রাখা হয়েছে পুরোনো বাড়ীর পরিত্যক্ত ঘরে। পরিত্যক্ত ঘরটির একাংশের মেঝেতে বড় মা শাহারা বানু থাকেন। সাথে কোন মানুষ না থাকলেও রাতের সঙ্গী হয়ে থাকেন ২ জোড়া কবুতর। ঘরে স্যাতস্যাতে পরিবেশ। অন্যঅংশের মেঝেতে থাকেন ছোট মা লালমতির নেছা। তিনিও রাতে একা থাকেন। তার ভাগ্যে কবুতর না জুটলেও রয়েছে লাকড়ির স্তুপ।

সম্প্রতি একটি মামলার তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন ওই বাড়ীতে গেলে এমন পরিস্থিতি নজরে আসে। তিনি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপরই ছোট মাকে জসিম উদ্দিন নিজের ঘরে নিয়ে যান আর বড় মাকে ছোট মায়ের স্থানে নিয়ে আসেন।
বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৃদ্ধার সন্তানদের সাথে কথা বলেন। সিদ্ধান্ত হয় বড় মাকে কবিরাজ খোরশেদ নিজের বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাবেন এবং চিকিৎসাসহ ভরণ পোষন দিবেন। আর ছোট মাকে জসিম নিজের ঘরে রাখবেন এবং ভরণ পোষন দিবেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল পর্যন্ত জসিম উদ্দিন ছোট মাকে নিজের ঘরে নিলেও কবিরাজ খোরশেদ আলম বড় মাকে নিজের বাড়ীতে নেননি।

বৃদ্ধা শাহারা বানু বলেন, স্বামী মারা গেলে ভাগ্য এমনি হয়। তওফিক অনুযায়ী ছেলেরা খাবার পাঠায়। তবে ছেলেদের প্রতি কোন ক্ষোভ নেই তার।

বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মজুমদার বলেন, আইডি কার্ড না থাকায় বৃদ্ধা শাহারা বানুকে বয়স্কভাতা বা বিধবা ভাতা দিতে পারছি না। তবে তোরাব আলী কবিরাজের ছোট স্ত্রী লালমতির নেছাকে বিধবা ভাতা, ছেলে জসিমকে ১০ টাকা কেজির চাউল, মেয়ে রেজিয়া বেগমকে বিধবা ভাতা, রেজিয়ার ছেলে জামালকে প্রতিবন্ধী ভাতা ও ইসমাইলকে ভিজিডি’র চাউল দেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধার খোঁজখবর রাখার জন্য স্থানীয় মেম্বার আবুল বাশারকে দায়িত্ব দিয়েছি। পরিত্যক্ত ঘর থেকে বৃদ্ধা মাকে কবিরাজ খোরশেদ তার ঘরে নিয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছে।