বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছেন মুক্তিযোদ্ধা আসলাম

শরীরে পঁচন ধরেছে; উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন

626

স্টাফ রিপোর্টার ।।  লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের পারবাইন গ্রামের মরহুম আবদুল আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা (গেজেট নং ৬৪২৫) আসলাম মিয়া কর্মজীবনে একজন পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। নিজের গ্রাম ছাড়াও আশে পাশের কয়েক গ্রামে পল্লী চিকিৎসায় তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। গভীর রাতে কেউ অসুস্থ হওয়ার খবর শুনলে চলে যেতেন দেখতে। রোগীর সমস্যা বুঝে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেন। তাঁর এই চিকিৎসায় অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠতেন। সমস্যা গুরুতর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করতেন।

সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় যিনি নিজের জীবনের ৪০টি বছর ব্যয় করেছেন সেই বীরমুক্তিযোদ্ধা আসলাম মিয়া আজ বিনাচিকিৎসায় ধুকেধুকে মরছেন। দু’মাস ধরে তিঁনি দাঁড়াতে বা বসতে পারছেন না। ২৪ ঘন্টা শুয়ে কাটাচ্ছেন। শরীরে পঁচন ধরেছে। শরীর থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কষ্টকর সেবা যতেœ স্ত্রী সন্তানরাও বিরক্ত হয়ে গেছেন। কিছুদিন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা কে রান্না ঘরে রাখার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য বর্তমানে ছেলে ফারুক আহমেদের বিল্ডিংয়ের করিডোরে ঠাঁই হয়েছে তাঁর। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে থাকলেও ফারুক আহমেদ একাই বাবার দেখভাল করছেন বলে দাবী করেন। মাঝে মাঝে মেয়েরাও এসে বাবার খেদমত করে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ছালেহা বেগম।

মৃত্যুপথযাত্রী ও অর্থসংকটের অজুহাতে তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। উন্নত চিকিৎসার এই সময়ে চিকিৎসা বিষয়ে কোন কোর্স না থাকা গৈয়ারভাঙ্গা বাজারের লাকী মেডিকেল হলের মো: বাহারুল ইসলাম এর প্রেসক্রিপসন (যদিও বিএমডিসি সনদ ছাড়া কেউ প্রেসক্রিপসন ব্যবহার করে ঔষধ লিখতে পারেন না) অনুযায়ী তাঁকে ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ বীরমুক্তিযোদ্ধা আসলাম মিয়া ছেলে ফারুক আহমেদের বিল্ডিংয়ের গেইটের সামনের করিডরে শুয়ে আছেন। শরীরে একাধিক স্থানে পঁচন ধরেছে। অন্যের কথা শুনলেও মুখে কিছু বলতে পারেন না। চিকিৎসা বা সেবা যতেœর অভাব হচ্ছে কিনা প্রশ্ন শুনে নিরব থাকলেও তাঁর চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে দেখা যায়।

উন্নত চিকিৎসা করাচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ছালেহা বেগম বলেন, সরকার প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়। এই টাকা খাওয়া ও ঔষধে শেষ হয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই।

ছেলে ফারুক আহমেদ বলেন, আমি সৌদি আরবে থাকতাম। বাবার সেবাযতেœর জন্যই ৫বছর আগে দেশে চলে এসেছি। ২মাস ধরে বাবার শরীরে পঁচন ধরেছে। সবাই বলে মৃত্যুর আগে নাকি শরীরে ঠোস পড়ে। এটার নাকি চিকিৎসা হয় না। তবে আমি সপ্তাহে একদিন বাবার চুল দাঁড়ি কেটে দিই। গোসল করিয়ে দিই।