বাগমারা সিএনজি স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রন কার?

শ্রমিকদের দু’গ্রুপে পাল্টাপাল্টি হামলা ও মামলা

213

স্টাফ রিপোর্টার।। সিএনজি স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রন ও জিবি উঠানোকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছে লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার। সংঘর্ষে আহত হয়েছে উভয়পক্ষের ১০/১২জন সিএনজি শ্রমিক। গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন কমপক্ষে ৫জন। এদের মধ্যে দেলোয়ার ও মামুন নামে দু’জন পথচারীর অবস্থা আশংকাজনক। দেলোয়ারের দুটি পা ও ২টি হাত ভেঙ্গে গেছে। মাথায়ও আঘাত করা হয়েছে। মামুনের হাত ও মাথায় রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও পথচারীদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর সকালে বাগমারা জিরো পয়েন্ট ও রেল গেইটে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে উভয় পক্ষ বাজার থেকে চলে যায়। জনমনে প্রশ্ন উঠছে বাগমারা বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ড কার? কারা নিয়ন্ত্রন করছে? কারা নিয়ন্ত্রন নিতে চায়? একপক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষকে কারা ক্ষেপিয়ে তুলছে?

সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লা জেলা অটো টেম্পু-বেবী টেক্সি-সিএনজি ও মিশুক শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্টঃ ২০৩৬) এর সদস্য, লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের দত্তপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় একটি মামলা (নং ০৫, তাং ২১/১২/২০২০ইং) দায়ের করেছেন। মামলার বিবাদীরা হলেন-বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সোলেমান, পূর্ব অশ্বথতলা গ্রামের আবদুল মান্নান মেম্বারের ছেলে আলেক হোসেন, আলী আশ্রাফের ছেলে আলী হোসেন, মোঃ হোসেনের ছেলে আবুল হাশেম, মৃত আইউব আলীর ছেলে আবু হানিফ, অশ্বথতলা গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া, কানিয়াপুকুর পাড়ের তালেব আলীর ছেলে আবদুর রহিম বাদশা, পূর্ব অশ্বথতলার আবুল হাশেমের ছেলে মোক্তার হোসেন, মৃত আলী আশ্রাফের ছেলে আক্তার হোসেন, ফকির আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন, আলী আশ্রাফের ছেলে সফি উল্যাহ, রুস্তম আলীর ছেলে আবদুর রহিম ও মৃত আবদুল মজিদের ছেলে মোঃ সাগর।


মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিগত ৭/৮মাস ধরে রেজিঃ নং ২০৩৬ এর সদস্যরা সিএনজি স্ট্যান্ড পরিচালনা করে আসছে। অন্যান্য দিনের মত ঘটনার দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৭টায় বাদীসহ সৈয়দপুর গ্রামের সোহেল, দুতিয়াপুর গ্রামের মোস্তফা, পূর্ব অশ্বথতলা গ্রামের রিয়াজ হোসেন বাগমারা জিরো পয়েন্টে যায় এবং যানজট নিরসনে কাজ শুরু করে। ওই সময় বিবাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় তৈরি অস্ত্র নিয়ে বাদীসহ তার সঙ্গীয়দের উপর হামলা করে। হামলাকারীরা কয়েকজন পথচারীকেও কুপিয়ে জখম করে। আহতরা হলেন-দুতিয়াপুর গ্রামের মামুন মিয়া, মিজান, বাবুল, দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দপুর গ্রামের আলম, শাহাদাত হোসেন বিল্লাল, সৈয়দপুর গ্রামের সোহেল, দুতিয়াপুর গ্রামের মোস্তফা, পূর্ব অশ্বথতলা গ্রামের রিয়াজ হোসেন। হামলাকারীরা রেজিঃ নং ২০৩৬ এর অফিস ভাংচুর করে নগদ ১লক্ষ ২৬ হাজার টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে আহতদের পক্ষে বাজারে অবস্থিত কিছু লোক জড়ো হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করে রেল গেইট এলাকায় গেলে সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আরো কয়েকজন আহত হয়। এঘটনায় বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব অশ্বথতলা গ্রামের আলী আশ্রাফের ছেলে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাদী হয়ে ৮জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় একটি মামলা (নং ০৬, তাং ২২/১২/২০২০ইং) দায়ের করেন। মামলার বিবাদীরা হলেন- দত্তপুর গ্রামের মৃত আবদুল সালামের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫নং মামলার বাদী), বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক পূর্ব অশ্বথতলা গ্রামের মৃত আজিজ মেম্বারের ছেলে রফিকুল ইসলাম মোহন, দুতিয়াপুর গ্রামের মৃত মোতালেব মিয়ার ছেলে মোঃ মামুন, সৈয়দপুর গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে সোহেল, আবদুল মজিদের ছেলে বাবুল মিয়া, মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে মোঃ মোস্তফা, সৈয়দপুর গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে ইকবাল হোসেন, দুতিয়ারপুর গ্রামের শাহ আলম মেম্বারের ছেলে মোঃ আউয়াল।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা ঘটনার দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৮টায় বাগমারা রেলগেইট এলাকায় বাদীসহ ভিকটিমদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন-মোঃ আলী, নাইমা আক্তার, খোরশেদ আলম, আক্তার হোসেন, দুলাল হোসেন, খোকন, জহিরুল ইসলাম ও আলী আশ্রাফ। বিবাদীরা বাদীর সঙ্গে থাকা নগদ ১২ হাজার ৫শ টাকা নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগমারা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী আংশকা প্রকাশ করে বলেন, সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ে বাজারে এভাবে হামলা পাল্টা হামলা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকলে ক্রেতা শূণ্য হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহি বাগমারা বাজার। দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তিসহ বাজারের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে একটি কমিটি গঠনের দাবী করেন তারা।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, বাগমারা বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রনে সিএনজি শ্রমিকদের দুটি সংগঠনের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই মামলা করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বাগমারাসহ লালমাই উপজেলায় কাউকে চাঁদাবাজী করতে দেওয়া হবে না।