স্টাফ রিপোর্টার ।। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও তথ্য গোপন করে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগে লালমাই উপজেলার বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো ) রবিউল আলমকে মারধর করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। রবিবার বিকাল অনুমান ৩টায় বাগমারা বাজারস্থ তার ব্যক্তিগত চেম্বার মেসার্স তানহা মেডিকেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় রবিউল আলমের বড় ভাই আদম সফি উল্যাহ বাদী হয়ে মারধর ও ভাংচুরের অভিযোগে বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনসহ দুতিয়াপুর ও দত্তপুর গ্রামের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে লালমাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপসর্গ কমে যাওয়ায় ১ম নমুনা দেওয়ার ৫/৬ দিন পর থেকেই অফিসিয়ালি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা স্যাকমো রবিউল আলম ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করেন। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে রোগী দেখায় অনেকে তার ১ম নমুনার রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলেন। রবিউল তাদের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে জানান। কিন্তু সোস্যাল মিডিয়ায় তার করোনা পজেটিভ হওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ১২ জুলাই বিকাল অনুমান ৩ টায় ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদসহ কয়েকজন তার চেম্বারে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী দেখার বিষয়ে জানতে চান। ওই সময় স্যাকমো রবিউল ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদের শার্টের কলারে ধরে উল্টো প্রশ্ন করেন, তুই এটা জানার কে? এনিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে তার হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে তানহা মেডিকেলের কর্মচারীরা চেম্বারের সাটার বন্ধ করে ছাত্রলীগের কর্মীদের আটক করে মারধর করতে চাইলে ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রবিউলকে মারধর করে। পরে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে সাটার খোলে দিলে ছাত্রলীগ কর্মীরা চলে যায়।
বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম রাব্বি বলেন, করোনা নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার খবর পেয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী রবিবার বিকালে স্যাকমো রবিউলকে তার চেম্বারে জিজ্ঞাসা করতে যায়। ওই সময় রবিউল ও তার কর্মচারীরা ছাত্রলীগের কর্মীদের তার চেম্বারের সাটার বন্ধ করে মারধর করার চেষ্টা করে।
বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী ও বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল হান্নান মিয়াজী বলেন, স্যাকমো রবিউল ১ম নমুনা দেয়ার কয়েকদিন পর থেকেই তানহা মেডিকেলে রোগী দেখা শুরু করেন। এনিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেয়।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার রবিউল আলমকে মারধর ও ভাংচুরের ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জয়াশীষ রায় বলেন, উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত ২০ জুন শনিবার উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো ) রবিউল আলম’র ১ম নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী ওইদিন থেকেই তাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছিল। রিপোর্ট না আসায় গত ৭ জুলাই তার ২য় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৯ জুলাই ২য় নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসায় তাকে সুস্থ ঘোষনা করা হয়। তবে ১২ জুলাই পাওয়া রবিউলের ১ম নমুনা পরীক্ষার পজেটিভ রিপোর্ট আসে।
এবিষয়ে চিকিৎসাধীন স্যাকমো রবিউল আলম কে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।