স্টাফ রিপোর্টার ।। চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন ডিগ্রী না থাকলেও হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করার অভিযোগে লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারস্থ রেলগেইন সংলগ্ন আল আমিন মেডিকেল হলের ভুয়া চিকিৎসক আলী নেওয়াজ প্রকাশ রাজু কবিরাজ কে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব এই দণ্ডাদেশ দেন। এসময় বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আনোয়ার উল্যাহসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
জরিমানার অর্থ পরিশোধের পর ভুয়া চিকিৎসক আলী নেওয়াজ ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারকের নিকট মুচলেকা দিয়ে অঙ্গীকার করেন, যেহেতু তিনি চিকিৎসক নন, সেহেতু তিনি আর চিকিৎসাকার্য করবেন না এবং ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে তাৎক্ষনিক কথিত চিকিৎসালয় বন্ধ করেন।
উল্লেখ্য গত ২৭ মে সাপ্তাহিক লালমাই বার্তার ১ম পাতায় এক কলামে ‘রাজু কবিরাজের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসে।
লালমাই বার্তার নিউজটি হুবহুঃ আলী নেওয়াজ প্রকাশ রাজু কবিরাজ। লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারস্থ রেলগেইট সংলগ্ন আল আমিন মেডিকেল হলের একাংশে নিয়মিত রোগী দেখেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন ডিগ্রী না থাকলেও গত দেড় যুগ ধরে বিশেষজ্ঞ সার্জন সেঁজে হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়েছেন। চেম্বার এলাকায় নিজস্ব ভবনে চালু করেছেন পঙ্গু হাসপাতাল। অনুমোদনবিহীন ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। অপচিকিৎসায় এই পর্যন্ত অনেক রোগী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের বলিপদুয়া গ্রামের আবদুল বারেকের বাক প্রতিবন্ধী শিশু পুত্র সফিকুর রহমান একটি দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পায়। ওই সময় চিকিৎসার জন্য রাজু কবিরাজের চেম্বারে নেওয়া হলে তিনি শিশু সফিকের পা প্লাষ্টার করে দেন। প্লাষ্টারে ভুল হওয়ায় কিছু দিন পর সফিকের পায়ে পঁচন ধরলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা হাটু পর্যন্ত পা কেটে ফেলেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আলী নেওয়াজ প্রকাশ রাজু কবিরাজ নিজে রোগীর চিকিৎসা দিলেও প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন না। ঔষধের নাম লিখে দেন আল আমিন মেডিকেল হলের মালিক।
অপচিকিৎসার শিকার সফিকুল আলম বলেন, কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার এক পায়ের একটি হাড় ভেঙ্গেছে। রাজু কবিরাজ পুরো পায়ে প্লাষ্টার করে দেয়। কয়েকদিন পর আমার পুরো পায়ে পঁচন ধরে। পরবর্তীতে আমি একজন হাড়ভাঙ্গা বিশেষজ্ঞ কে দেখাই। ওই চিকিৎসক সর্তক করে বলেন, আরো এক সপ্তাহ প্লাষ্টার থাকলে পুরো পা পঁচে যেতো এবং পা কেটে ফেলতে হতো।
অভিযুক্ত আলী নেওয়াজ প্রকাশ রাজু কবিরাজ বলেন, ডিগ্রী নেই সত্য। তবে আমি অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ করি। হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা করতে হলে অনেক সময় রোগীর থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। সেজন্য বাড়ীতে রোগী রাখার ব্যবস্থা করেছি। এটা হাসপাতাল নয়।