করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবসম্মত ও সময়োচিত। ঘোরতর বিপদের এই মুহূর্তে এ নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পরিপালন করাই হবে সুনাগরিকের কাজ।
৩১ দফা নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। তিনি চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সবার জন্য ‘পিপিই’ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সাধারণভাবে সবার ‘পিপিই’ পরার দরকার নেই।
দুঃখজনক হল, ইদানীং প্রশাসনসহ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘পিপিই’ ব্যবহারের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। মনে রাখা দরকার, ‘পিপিই’ কোনো ‘ফ্যাশনেবল’ পোশাক নয়; এটি তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা করোনা আক্রান্ত রোগী এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত।
যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, এক্ষেত্রে অনেকে অমানবিক আচরণ করতেও পিছপা হচ্ছে না। এটি পরিহার করা জরুরি। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণের পেছনে ‘অনুঘটকের’ ভূমিকা পালন করছে ‘গুজব’।
প্রধানমন্ত্রী গুজব রটানো বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, গুজবে কান দেবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না। এক্ষেত্রে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। দিনমজুর, শ্রমিক ও কৃষকসহ সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে, সেজন্য তাদের সাহায্য করার কথা উল্লেখ করে ‘সোশ্যাল সেফটিনেট কার্যক্রম’ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখা, সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যাতে স্থবির না হয়ে পড়ে, সে বিষয়েও যথাযথ নজর দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঘনবসতি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতনতা, ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এ অঞ্চলকে করোনাভাইরাস মহামারীর বড় ধরনের ঝুঁকিতে রেখেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বস্তুত করোনার বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরও এ অঞ্চলের দেশগুলোর ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব উত্তরণে বাজেট বরাদ্দ থেকে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
এটি আমাদের জন্য তথা দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। আমরা আশাবাদী, করোনাভাইরাস সৃষ্ট সংকট মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি আবারও পূর্ণশক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।
এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ জন। মারা গেছে ৫৩ হাজার ২৫১ জন। অন্যদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন; আর মারা গেছেন ৬ জন।
করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও ফায়দা লোটার মনোভাব সর্বতোভাবে পরিহার করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে, মানবিক হতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনসহ প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালনের মধ্য দিয়ে বিপদ ও ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টাই হোক এ মুহূর্তে করণীয়।