নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিয়ে পুরস্কার পেলেন কৃষক

578

স্টাফ রিপোর্টার  ।।  কুমিল্লার লালমাইয়ে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ায় পুলিশের কাছ থেকে পুরষ্কার পেলেন কৃষক খোরশেদ আলম ও গ্রাম পুলিশ সোহাগ। তাদের বাড়ী উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের হাতিলোটা গ্রামে। বুধবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম এর পক্ষে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব তাদের হাতে পুরষ্কারের নগদ অর্থসহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন।

জানা যায়, কৃষক খোরশেদ আলম আখের চাষ করেন। কয়েকদিন আগে গভীর রাতে কয়েকটি শিয়াল তার আখ খেত নষ্ট করে ফেলে। এজন্য প্রতিরাতেই তিনি আখ খেতে পাহারা দেন। গত ৭ জুন রাত অনুমান ১১টায় তিনি বাড়ী থেকে বের হয়ে আখ খেত পাহারা দিতে চলে যান। রাত অনুমান ১.৩০টায় (৮জুন) তিনি বাড়ী ফিরে আসেন। বাড়ীতে প্রবেশ করতেই নাকে পেট্রালের গন্ধ লাগে। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন তার প্রতিবেশি দেলোয়ারের ঘরের চার পাশে ঘরের বেড়া ও টিনের চালে তিনজন লোক পেট্রোল ছিটাচ্ছেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে দুজন অন্ধকারে শুয়ে থাকার অভিনয় করেন, অন্যজন মুরগির খাঁছি মাথায় দিয়ে উঠানে বসে পড়েন। তিনি এগিয়ে গিয়ে মুরগির খাঁছি উঠিয়ে দেখেন যে, দেলোয়ারের মেয়ে সালমা আক্তারের প্রাক্তন স্বামী আবু তাহের। এতো রাতে ঘরের বাহিরে কেন? প্রশ্ন করে একটু খাতির জমিয়ে নেন। তারপর তাকেসহ ৩জনকে কৌশলে ঘরে নিয়ে বসিয়ে রেখে কৃষক খোরশেদ মোবাইলে গ্রাম পুলিশ সোহাগকে খবর দেন। গ্রামপুলিশ এলাকাবাসীকে নিয়ে ওই বাড়ীতে যান এবং নাশকতাকারীদের আটক করে থানা পুলিশ কে জানান।

খবর পেয়ে রাতেই লালমাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ধৃতদের নিজ হেফাজতে নেন। ওই সময় পুলিশ পেট্রোল ব্যবহৃত ২টি ৭আপের বোতল, একটি প্রান ড্রিংকিং ওয়াটারের বোতল, একটি গ্যাসলাইট জব্দ করে এবং সালমাদের বাড়ীর ৪শ ফুট দূর থেকে নাশকতাকারীরের ভাড়া করা একটি এ্যাম্বুলেন্সও (রেজি নং কুমিল্লা-ছ -৭১-০০২৮) উদ্ধার করে। আটককৃতরা হলেন-আদর্শ সদর উপজেলার বারপাড়ার গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে আবু তাহের (৩০), ভুট্টু মিয়ার ছেলে শুভ মিয়া (২৫) ও মৃত কামাল হোসেনের ছেলে মিঠুন (২৮)।

এঘটনায় আটককৃত তিনজন ও অজ্ঞাতনামা ২/৩জনের বিরুদ্ধে সালমা আক্তারের মা পারভিন আক্তার বাদী হয়ে লালমাই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৪(৩)/৩০ ধারায় একটি মামলা (নং ০২, তাং ৮/৬/২০২০ইং) দায়ের করেন।

১০ জুন দুপুরে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব সম্ভাব্য নাশকতার হাত থেকে একটি পরিবারকে রক্ষা ও নাশকতাকারীদের কৌশল করে ধরিয়ে দেওয়ায় কৃষক খোরশেদ আলম ও সহায়তা করায় গ্রাম পুলিশ সোহাগকে পুরষ্কৃত করেন।

উল্লেখ্য কুমিল্লা ইপিজেড এ চাকরি করার সুবাধে প্রায় ৩ বছর পূর্বে আবু তাহেরে সাথে পরিচয় ও প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে সালমা আক্তারের। একপর্যায়ে নিজের স্ত্রী ও কন্যা সন্তান থাকার কথা গোপন রেখে সালমাকে বিয়ে করে তাহের। বিয়ের কথা জানাজানি হওয়ায় তাহেরের স্ত্রী ও বোন কয়েকজন লোক ভাড়া করে সালমার কাছ থেকে জোরপূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর নেয়। এরপর থেকে সালমা প্রাক্তন স্বামীকে এড়িয়ে চলতে থাকে। এরপরও তাহের তার পিছু ছাড়ে না। তাকে আবার বিয়ে করতে চায়। তাহেরের যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে সালমা গত ১৭ এপ্রিল চাকরি ছেড়ে বাড়ী চলে যায়। ঠিকানা সংগ্রহ করে ঈদুল ফিতরের পর তাহের দু’জন লোক নিয়ে সালমাদের বাড়ীতে যায়। তখন সালমা তার বাড়ীর লোকজনের উপস্থিতিতে তাহেরকে ২য়বার বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে যায় তাহের। এরপর থেকে সে ফোনে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল।

কৃষক খোরশেদ বলেন, নাশকতাকারীরা ঘরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে সালাম আক্তার ও তার মা পারভীন বেগম পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। আমি গ্রাম পুলিশের সহায়তায় কৌশলে তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি।

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, কৃষক খোরশেদের বিচক্ষণতা ও কৌশলের কারনে একটি পরিবাারের ২জন নারী হত্যাচেষ্টা থেকে রক্ষা পেয়েছে। ধৃত হয়েছে হতা চেষ্টাকারীরা। এতে গ্রাম পুলিশ সোহাগেরও অবদান রয়েছে। তাই এসপি মহোদয়ের নির্দেশে দু’জনকে পুরষ্কৃত করেছি।