জৌলুস হারাচ্ছে বাগমারা বাজার

529

স্টাফ রিপোর্টার  ||  লালমাই উপজেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বাগমারা বাজার। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে বাজারটি। রাজস্ব আদায় হলেও বাজারটিতে হয়নি অবকাঠামো উন্নয়ন। বাজার পরিচালনায় সরকারিভাবে নেই কোন কমিটি। ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি সমিতি থাকলেও দেড় বছর ধরে এটিও প্রায় নিষ্ক্রীয়। নির্দিষ্ট প্রতিষ্টান বা মার্কেট কেন্দ্রীক পাহারাদার থাকলেও রাতে বাজারের পাহারায় নেই কোন সমন্বিত ব্যবস্থা। সেকারনে রাতে বাজারে চুরির ঘটনাও বাড়ছে। গত ৫বছর ধরে বাজারের প্রধান ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। কিছু ড্রেন ইতিমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। ড্রেনে গড়ে উঠেছে দোকানঘর। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ক্রেতা ও পথচারীদের জন্য বাজারে নেই কোন পাবলিক টয়লেট। সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজি ও অটো রিক্সা স্ট্যান্ড। দিনদুপুরে মালামাল লোড আনলোড করায় বাজারের প্রধান সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। বাজারে নেই কোন যাত্রীছাউনি। এভাবে চলতে থাকলে বাজারটি থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ক্রেতাশূণ্য হয়ে পড়তে পারে ঐতিহ্যবাহি বাগমারা বাজার।


ডাকাতিয়া নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা শতবর্ষী বটতলার এই বাজারে সহস্রাধিক স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৫শতাধিক ভাসমান দোকান রয়েছে। লালমাই ছাড়াও বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম উপজেলার সীমান্ত এলাকার জনসাধারণও বাণিজ্যিক কারনে এ বাজারে আসে। এখানে দেশের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে। বাজারকে কেন্দ্র করে ভুমি অফিস, পল্লী বিদ্যুতের জ্যোনাল অফিস, একটি ২০ শয্যা হাসপাতাল, ৬/৭টি ডায়াগণষ্টিক সেন্টার, ২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি কিন্ডারগার্টেন, ৪টি হাফেজী মাদ্রাসা, ৫টি মসজিদ, বড় বড় কোম্পানীর ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার শো-রুম, ৭/৮টি হোটেল রেস্টুরেন্ট ও অর্ধশতাধিক ঔষধ ফার্মেসী রয়েছে। বাজারটিতে প্রতিদিন ২০ সহস্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে। কমপক্ষে কোটি টাকা লেনদেন হয়। ব্যাংকিং লেনদেন মাঝে মাঝে ৩ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন রেলপথ ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক বাগমারা বাজারের উপর দিয়েই অতিক্রম করেছে। এতে বাজারে জনসমাগম যেমনি বেড়েছে তেমনি জনসাধারণের চলাচলে ঝুঁকিও বেড়েছে। বাজারের বেশিরভাগ জায়গাই সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। লীজ নিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছে অনেকে। বেশিরভাগ লীজ মালিক ঘর ভাড়া দিয়ে রেখেছে। আবার অনেকে লীজ নিয়েও দোকানঘর বুঝে নিতে পারেনি অবৈধ দখলবাজদের ভয়ে।


বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল লতিফ স্যার একজন সজ্জন ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। গত বছরের ২০ ফেব্রয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর ওই কমিটির সেক্রেটারী ফজলুল হক মুন্সীসহ অন্যান্যরা নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েন। তবে কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম বাজারের বর্তমান ইজারাদার হওয়ায় তিনি কিছুটা সক্রিয় রয়েছেন। প্রচার রয়েছে মরহুম আবদুল লতিফ স্যার ও মরহুম হাফেজ কোম্পানীর সমন্বিত কমিটি কঠোর ও সফল ছিল। তারা তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক’র সাথে সমন্বয় করে বাজার পরিচালনা করতেন।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক, মাষ্টার জয়নাল আবেদীন, সাদেক মজুমদার, আমিনুল ইসলাম সওদাগর, ইউনিভার্সেল কামাল, ডা: শাহ আলম, অমর কৃষ্ণ বনিক মানিক, নূর হোসেন, হাবিবুর রহমান, আবদুল মোতালেব, ডেন্টিস্ট মফিজুল ইসলাম মুন্না, কামরুল হাসান ভুট্টু ও আবদুল হান্নান মিয়াজীসহ বাজারের ব্যবসায়ীরা লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের দাবী সম্প্রসারিত বর্তমান বাজারটি বাগমারা দক্ষিণ ও বাগমারা উত্তর ইউনিয়নে অবস্থিত। তাই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদ্বয়, সংশ্লিষ্ট মেম্বারবৃন্দ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কমিটি করা হোক।

লালমাই উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী ইউনিভার্সেল কামাল বলেন, শতবর্ষী বাগমারা বাজার কে রক্ষায় প্রথমত একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে বাজারকে সমন্বিত পাহারার আওতায় আনতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।