জরুরী চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত লালমাইবাসী

305

জহিরুল ইসলাম জহির ।। করোনা ভাইরাসের কারণে যেখানে সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবা আগের তুলনায় কয়েকগুন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে সেখানে জরুরী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলাবাসী। উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটি দুপুর ১২টার পর বন্ধ থাকায় চিকিৎসা ঝুঁকিতে রয়েছেন এই উপজেলার আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। হাসপাতালটিতে ২৪ ঘন্টার জরুরী বিভাগ ও ইনডোর সেবা চালু করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, ২০০৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ১ম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এরপর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এমপির উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আনুষ্ঠানিকভাবে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটির আইটডোর সার্ভিস উদ্বোধন করেন। ওই সময় জনদাবীর মুখে তিনি শীঘ্রই ইনডোর সার্ভিস চালুসহ হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন।

উদ্বোধনী দিন থেকে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র সার্জারী কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র গাইনি কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র এনেস্থেসিয়া কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও ৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ মোট ২৩ জনের জনবল নিয়ে আউটডোর কার্যক্রম শুরু করলেও হাসপাতালটিতে দীর্ঘ ৩বছরেও ইনডোর সেবা চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ইনডোর চালু না থাকার অজুহাতে হাসপাতালটিতে ২৪ ঘন্টার জরুরী চিকিৎসা সেবাও বন্ধ রয়েছে।

লালমাই উপজেলাধীন বাগমারা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও একজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে। বর্তমানে মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্টের পদ খালি। ভবন না থাকায় অন্যরা ২০ শয্যা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মোঃ রবিউল আলমের বিরুদ্ধে অফিস সময়ে বাগমারা বাজারস্থ ব্যক্তিগত চেম্বারে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে।

পেরুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এবং বেলঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন রয়েছে। এদের মধ্যে পেরুলের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও দুই জন সহকারী সার্জন ২০ শয্যা হাসপাতালে এবং বেলঘরের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ভুশ্চি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাকই (উত্তর) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন রয়েছে। ওরা দু’জনেই লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে বাকই উত্তরের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বর্তমানে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়াও একজন সার্জারী কনসালটেন্ট, একজন গাইনি কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার, দুই জন সহকারী সার্জন, ৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, দুই জন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ মোট ১৮জন কর্মরত রয়েছেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইয়াসির আরাফাতের তৎপরতায় কুমিল্লার সিভিল সার্জন এক আদেশে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের আরএমও ডাঃ জয়াশীষ রায় কে লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেন। তবে আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ইউএইচএন্ডএফপিও এর কাছে থাকায় সিভিল সার্জনের এই আদেশেও লালমাইয়ের স্বাস্থ্য সেবায় কোন পরিবর্তন আসেনি।

লালমাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: কামাল হোসেন বলেন, লালমাই উপজেলাবাসী জরুরী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। শীঘ্রই একটি এ্যাম্বুলেন্স ও ২৪ ঘন্টা জরুরী বিভাগ চালুর দাবী জানাচ্ছি।

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালে ২৪ঘন্টা জরুরী বিভাগ চালু করতে গত ২০ মার্চ আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জয়াশীষ রায় বলেন, সিভিল সার্জন মহোদয় নিজস্ব ক্ষমতাবলে আমাকে ইউএইচএন্ডএফপিও করেছেন। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু না হলে এতা কম সংখ্যক জনবল দিয়ে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াতুজ্জামান বলেন, হাসপাতালটিতে ইনডোর চালু না থাকায় বর্তমানে জরুরী বিভাগ চালু করা সম্ভব নয়।