এম এস দোহা
চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাই করোনার চলমান সংকটে চোরেরা সেক্রিফাইস করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে কোন যুক্তিতে? পৃথিবীর অস্তিত্ব যতদিন, চোর বাটপারের তৎপরতাও থাকবে চলমান। নচেৎ ভাল কাজ ও সৎ লোকের মানদন্ড নির্ধারণের ফর্মুলা-ই হারিয়ে যাবে।
করোনা সংকটে সরকারি ত্রাণ চুরি নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্সে। কিন্তু এরপরও ত্রাণ চোরেরা থেমে নেই। চলছে দুর্বার গতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা। প্রায় প্রতিদিন আসছে চুরির দায়ে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন। সেই সাথে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা বেড়েছে কয়েকগুন। করোনায় আর্বিভাব হয়েছে অনেকের জন্য সর্বনাশ হিসেবে। কারণ, ত্রাণ বিতরনে নিজ এলাকায় প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে অনেকরই প্রেস্টিস পাংচার। চুরির দায়ের মামলা, কোমড়ে দড়িসহ বিভিন্নভাবে তাদের ইজ্জত নিয়ে এখন চলছে টানাটানি। এর সাথে যোগ হয়েছে এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের সুপারভিশন ও ষাড়াঁশি অভিযান। অভিযোগ পেলেই তদন্ত। প্রমাণ সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত আদেশ। জারি হচ্ছে প্রজ্ঞাপন। শুনছেন না কোন তদবির, সুপারিশ। বরখাস্তের ভয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি বড় খতমের দোয়া পড়ছেন দিনরাত। অনেক আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছেন তার প্রতিপক্ষকে রিলিফচোর হিসেবে ধরিয়ে দেওয়ার সুযোগের জন্য। কারণ ধরা খেলেইতো বরখাস্ত। এক কথায় রাস্তা পরিষ্কারের সহজ তরিকা। বরখাস্তকৃত জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী আমেজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুরু করেছেন দলীয় প্রতীক লাভের তৎপরতা।
উল্লেখ্য, ত্রাণ চুরির দায়ে কতিপয় জনপ্রতিনিধির গ্রেফতারে এলাকার জনগণ মহাখুশি। আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নাই যে, দেশে অনেক ভালো জনপ্রতিনিধিও আছেন। যারা নিজেদের টাকায় ত্রাণ দিচ্ছেন। দিন রাত করছেন পরিশ্রম । কেউ কেউ তাদের হজ্বের জন্য জমানো টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন অসহায়দের মাঝে। কিন্তু গুটিকয়েক ত্রাণচোরা চেয়ারম্যান, মেম্বারের কারণে এসব জনপ্রতিনিধিদের ইতিবাচক কর্মকান্ড ম্লান হয়ে যাচ্ছে।মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ত্রাণ চুরির সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় জপ্রতিনিধিদের প্রতি সাধারণ মানুষের সামাজিক ধিক্কার ও ঘৃণা জন্মেছে। যা আগামীতো ভালো মানুষদের নির্বাচনে আগ্রহী হতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনে জেতার জন্য প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন, তা সরকারী সম্মানী বা বেতন দিয়ে সমন্বয় করতে কয়েক যুগ পেরিয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনে আবার প্রার্থী হলে প্রয়োজন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সবার তো আবার তেমন ব্যবসাপাতি নেই। তাছাড়া এখন ঘন ঘন বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগও হয় না। ত্রাণের মালও সবসময় দেখা মিলে না। তাই বড় ধরনের র্দুযোগের জন্য থাকেন ওৎপেতে। এ জন্য করোনায় অনেকই পুলকিত। এ সুযোগ কাজে লাগতে তারা মরিয়া। অনেকেও সফল। আবার অনেকে ফাঁদে পড়ে বেকায়দা ও নাস্তানাবুদ। যাকে বলে সর্বনাশ। আম ও ছালা দুটোই লাপাত্তা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক জনপ্রতিনিধি করোনা ইস্যুকে পুঁজি করে সরকারী অনুদানের বাইরে নিজ উদ্দ্যোগে ত্রাণ বিতরণের নামে চাঁদাবাজী উৎসবে মত্ত। প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের কাছ থেকে আদায় করছেন মোটা অংকের চাঁদা। নেই যথাযত হিসাব, তদারকি ও সমন্বনয়ের ব্যবস্থা। কাউন্সিলারদের চাঁদা উত্তোলনের তথ্য নেই মেয়রের কাছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের তথ্য উপজেলা প্রশাসনের অজানা। দাতাদের তালিকা ও সাহায্যের পরিমান রয়েগেছে অজ্ঞাত। কতটাকা উত্তোলন করলেন, কতজনকে ত্রাণ দিলেন এর কোন হিসাব নেই। যাকে বলে চোখে ধুলো দেওয়।া এর মাধ্যমেই অনেক চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর আগামী নির্বাচনী খরচের একটা বড় অংশ হাতিয়ে সফল। তারা নামকা ওয়াস্তে দু’চার জনকে ত্রাণ দেওয়ার ছবি ফটোসেশন করেই খালাস। অথচ সঠিকভাবে তদারকি ও সচ্ছতা সাধন করলে বেসরকারীভাবে আরো অধিক সংখ্যক মানুষকে সহযোগিতা সম্ভব ছিল। যা ইতিমধ্যেই সরকারের নীতি নির্ধারক মহল ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পর্যালোচনায় এসেগেছে। ফলে দুর্নীতিবাজ, অস্বচ্ছ জনপ্রতিনিধিদের মাঝে বেড়ে গেছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও বড় খতমের দোয়া পড়া পাঠ।