স্টাফ রিপোর্টার ।। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পেরুল উত্তর ইউনিয়নের জগতপুর গণকবর নিয়ে স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বিভ্রান্তি কাটেনি। গণকবরটিতে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদেরকে কারা হামলা করেছিলেন বা নিহতরা কারা ছিলেন এবিষয়ে দালিলিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যমতে নিহতরা ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ছিলেন। সোর্সের ভুল তথ্যের কারনেই এতোগুলো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
লালমাই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক আমিন ও লেয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ৮টায় মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর দুটি দল ভাটরা থেকে রওনা করে উৎসব পদুয়া পৌঁছলে লাকসাম থেকে সোর্সের মাধ্যমে খবর আসে বাসযোগে কিছু রাজাকার হরিশ্চর হয়ে কুমিল্লা যাচ্ছে। খবর পেয়ে মিত্র বাহিনীর সদস্যরা উৎসবপদুয়া রেললাইনের উপরে আসলে দেখেন, কুমিল্লামুখি একটি যাত্রীবাহি বাস জগতপুর ক্রস করছে। মিত্র বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষনিক বাসটিতে ব্ল্যান্ডার সাইড নিক্ষেপ করে। এতে বাসে আগুন ধরে যায় এবং বাসে থাকা অনুমান ৩৫জন মানুষ মারা যায়। মৃতদের ঘটনাস্থলে গণকবরে দাফন করা হয়। দূর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, বাসে কোন রাজাকার ছিলেন না। বাসযাত্রীরা লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও নাথেরপেটুয়া এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ছিলেন। পরবর্তীতে মোঃ হোসেন চৌধুরী নামে একজন নিজ খরচে গণকবরটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। প্রতি বছর ১৩ ডিসেম্বর গণকবরটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রাক্তন নির্বাহী অফিসার রূপালী মন্ডলও যোগদানের প্রথম বছর জগতপুর গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে এই শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম থেমে যায়। এদিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪ লেন প্রকল্পের কারনে যে কোন সময় জগতপুর গণকবর বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবী, গণকবরটি সরকারিভাবে চিহিৃত করে প্রতি বছর ১৩ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হউক।