খানকার গ্রাম হলদিয়া !

606

স্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের একটি গ্রাম হলদিয়া। এই গ্রামে সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। তৎকালীন কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মরহুম এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান ছিলেন এই গ্রামেরই কৃতি সন্তান। ১৯৮৪ সালে তাঁর হাত ধরেই গড়ে উঠেছে হলদিয়া উসমানিয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসা। গ্রামের মানুষদের উচ্চ শিক্ষিত ও কর্মঠ করতে তাঁর অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাঁর এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে কাজ করছেন মাষ্টার জয়নাল আবদীন, মরহুম ছিদ্দিকুর রহমানের সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও হলদিয়া মহিলা উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আবু তাহের রনিসহ গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রবাসীরা। ১৯৯৪ সালে ইতালি প্রবাসী ইয়াছিন মিয়াজীর উদ্যোগে আলী আশ্রাফ মিয়াজীর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রহমত আলী মিয়াজী উচ্চ বিদ্যালয়’। মাদ্রাসার পাশাপাশি স্কুলটির শিক্ষার আলোও ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

অথচ সেই হলদিয়া এখন নতুন করে মাজার ও খানকার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। গ্রামের তিন পাড়ায় ৪টি খানকা দৃশ্যমান। প্রতিটি খানকাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হলদিয়া ছাড়াও আশেপাশের গ্রাম থেকে ভক্তরা খানকার মাহফিলে আসে। খানকা গুলো হলো-ফকিরমুড়া মাজার ও খানকা শরীফ, দুলা মিয়া ফকিরের খানকা ও মাজার, আলী মিয়া মিয়াজীর খানকা ও মাজার এবং ফাতেমা মঞ্জিলে সৈয়দ মঈনুদ্দীন আহমেদ’র খানকা।

ফকিরমুড়া মাজার ও খানকা শরীফ

হলদিয়া পূর্ব পাড়ায় ফসলি জমির মাঠ সংলগ্ন শতবর্ষী গায়েবী মাজারটি ফকিরমুড়া মাজার হিসেবে পরিচিত। প্রচার রয়েছে মাজারে শায়ি আছেন শাহ আলী বোগদাদী গারদ আলী মিয়া (র:)। মাজারকে কেন্দ্র করে সেখানে একটি খানকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার এই খানকায় ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রতি মাসের শেষ রবিবারও খানকায় ছোট আকারে মাহফিল হয়। মাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন মানত করে জিলাপী ও চালের সিন্নি নিয়ে আসে। অনেকে নিয়ত করে মাজারে টাকাসহ গরু ছাগল দান করে।
মাজারের খাদেম হলদিয়া গ্রামের জাফর আহমেদ প্রকাশ জারু মিয়া বলেন, হলদিয়া গ্রামের মরহুম সুলতান আহমেদ মৃত্যুর পূর্বে খানকার জন্য ৭শতক জমি দান করেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি খানকার খাদেমের দায়িত্ব পালন করতেছি। খানকার দানবাক্সের আয় থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে বাকী টাকা বাৎসরিক ঔরসে ব্যয় করি। গ্রামবাসীও ওরসে মুক্তহস্তে দান করেন। মাজারটি অনেক গরম উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ ফকিরমুড়ার সাথে বেয়াদবি করলে শাস্তি পেতে হয়।

দুলা মিয়া ফকিরের মাজার ও খানকা
হলদিয়া গ্রামের মরহুম সেকান্তর আলীর ছেলে মরহুম দুলা মিয়া ফকিরের করবকে কেন্দ্র করে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে গড়ে উঠছে একটি খানকা ও মাজার। ৪ঠা আশ্বিন ফকিরের মৃত্যুবার্ষিকী হলেও প্রতি বছর ১৩ চৈত্র মাজারে ওরস ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুলা মিয়া জীবদ্দশায় দরবেশের বেশে চলাফেরা করতেন। সাদা মার্কিন কাপড়’র নেংটি ব্যবহার করতেন। খালি গায়ে বেশিরভাগ সময় চলাচল করতেন। একসময় শাহ অলি উল্যাহ রাজাপুরী দুলা মিয়া কে ফকির উপাধি দেন। কথিত রয়েছে স্থানীয়রা বস্তাভরে পুকুরে ফেলে দিলেও ২৪ ঘন্টা পর তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। আলৌকিক এই বিষয়টি তখনকার সময়ে সকলের নজর কাড়ে। তবে এই আলৌকিক তথ্যটির স্বপক্ষে উল্লেখযোগ্য তথ্য প্রমান দেখাতে পারেনি কেউ। মাজার ও খানকার খাদেম হিসেবে তার ছেলে জালাল আহমেদ দায়িত্ব পালন করতেছেন। ফকিরের নাতি দুবাই প্রবাসী আবদুল গাফ্ফার বলেন, দাদার দোয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এজন্য প্রতি বছর দাদার রুহের মাগফেরাত কামনায় আমরা ওরস’র আয়োজন করি। এতে বেশিরভাগ খরচ আমিই পাঠাই। এলাকাবাসীও সহযোগিতা করে। ওরসে কমপক্ষে ২ সহ¯্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে।

শাহ আলী মিয়াজীর মাজার ও খানকা
হলদিয়া পশ্চিম পাড়ার শাহ আলী মিয়াজী দীর্ঘদিন হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আবদুল গনি (র:) এর খাদেম ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। মৃত্যুর পর তার কবরকে কেন্দ্র করে মাজার ও খানকা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ৭ চৈত্র তার মৃত্যু দিবস হলেও প্রতি বছর চৈত্র মাসের ২য় রবিবার এই মাজারে ওরস ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাজারটি দেখাশুনা করেন মাষ্টার জহিরুল ইসলাম। ওরস ও মাহফিলে ব্যয় বহন করনে হুজুরের নাতি ইতালি প্রবাসী ইয়াছিন মিয়াজী।

ফাতেমা মঞ্জিলে সৈয়দ মঈনুদ্দীন আহমেদ এর খানকা
হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হওয়া ফাতেমা বেগম নামানুসারে স্বামী সামছুল হক হলদিয়া পশ্চিম পাড়ায় নিজের বাড়ীর নাম রাখেন ‘ফাতেমা মঞ্জিল’। সেই ফাতেমা মঞ্জিলেরই একাংশে গড়ে উঠেছে সৈয়দ মঈনুদ্দীন আহমেদ এর খানকা। প্রতি বছর ২০ মাঘ খানকায় ওরস ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সৈয়দ মঈনুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারীর সন্তান সৈয়দ শহিদ উদ্দিন অংশগ্রহন করেন। ওরসে হলদিয়া ছাড়াও অন্যান্য গ্রাম থেকে ভক্তরা আসেন।