করোনার ভয়াবহতা, অক্সিজেন সংকট, মানবিকতা

বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতাল, লালমাই

191

লালমাই বার্তা ডেস্ক।। বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালটিতে এখনো সরকারিভাবে ইনডোর স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুধুমাত্র আউটডোর সেবা চালু রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোন ধরনের সরকারি অর্থ বরাদ্দও আসেনি। তারপরও অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এমপির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও আবুল খায়ের কোম্পানীর সহযোগিতায় গত ২৫ এপ্রিল এই হাসপাতালটিতে ২টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ১২টি অক্সিজেন শয্যা স্থাপন করা হয়। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় জরুরী বিভাগেও দুটি অক্সিজেন শয্যা সেট করা হয়। সেই সময় আবুল খায়ের কোম্পানী থেকে সাড়ে ৭ হাজার লিটারের মোট ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়।

এরপর থেকে লালমাই উপজেলার করোনায় আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে অক্সিজেন সেবা নিতে পারছেন। গত কয়েকদিনে করোনা পজেটিভ না হয়েও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঘন্টার পর ঘন্টা অক্সিজেন সেবা নিয়েছেন অর্ধশতাধিক রোগী।

গত ২৮ জুলাই সকাল থেকে হঠাৎ করে বাগমারা হাসপাতালে করোনা রোগী বেড়ে যায়। ২৯ জুলাই রাত পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ১০ জন করোনা রোগী ভর্তি হন। ভর্তির পূর্বে তাদের বেশিরভাগ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে ছিল।

নিয়মিতভাবে অক্সিজেন সেবা দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৯টি অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি হয়ে যায়। হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ার উল্যাহ হিসেব কষে দেখেন অবশিষ্ট ৩টি সিলিন্ডার দিয়ে শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত হয়ত অক্সিজেন সেবা দেওয়া যাবে। আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় আন্তরিকতা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালি সিলিন্ডারগুলো রিফিল করতে পারছিলেন না। অক্সিজেন সেবা বন্ধ হয়ে গেলে কমপক্ষে ৩/৪জন করোনা রোগীর মৃত্যুর শংকা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার রাত অনুমান ৯টায় বিষয়টি জানতে পেরে লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব ও লালমাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ৫টি সিলিন্ডার রিফিলের জন্য নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন। কিন্তু এতো রাতে সিলিন্ডার রিফিল করা সম্ভব হচ্ছিল না। সম্ভাব্য সকল বিক্রয় ও রিফিল কেন্দ্রে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ার উল্যাহ কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত কে জানান। অবশেষে সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার গভীর রাত ২.৩০টায় ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে সক্ষম হন বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, উপজেলা প্রতিষ্ঠার ৪ বছরেও লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা স্বতন্ত্র উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রন কাগজে কলমে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুর রহমানের কাছে। আর্থিক সকল বরাদ্দ তাঁর কাছেই আসে। অথচ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গত দেড় বছরেও একটি মাস্ক বা হ্যান্ড সেনিটাইজার বাগমারা হাসপাতালে দেওয়া হয়নি। এটা বৈষম্য নয়কি?