‘‘আমি যখন শিক্ষক ছিলাম’’

519
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব

মোহাম্মদ আইয়ুব   ।।    চট্টগ্রাম সরকারি মহসীন কলেজে মাস্টার্সে পড়ছিলাম। একদিন পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কাগজপত্র গুছিয়ে আবেদন করলাম। যথাসময়ে প্রবেশপত্র পেলাম। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইবা দিলাম। ভাইবা বোর্ডের পাঁচ সদস্যই প্রশ্ন করলেন। সব কটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হলাম। আমার শিক্ষা সনদ গুলি দেখলেন। সবশেষে ভাইবা বোর্ডের প্রধান জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রশ্ন করলেন–

“আপনি কি সত্যি সত্যি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করবেন?

-জ্বি। করব, স্যার।
ঠিক আছে। আপনি আসেন।
-ধন্যবাদ, স্যার। আসসালামু আলাইকুম।
আমার কেন জানি মনে হলো, আমার প্রশ্নোত্তর ও শিক্ষাসনদ দেখে ভাইবা বোর্ডের সবাই সন্ত্তষ্ট হয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই নিয়মিত ৩/৪ ব্যাচ টিউশন করতাম। নিজের প্রতি মোটামুটি আত্মবিশ্বাস ছিল।
এডিবি’র অর্থায়নে পরিচালিত প্রজেক্টে নিয়োগ পাওয়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশুনা, টিউশন, মৎস্য চাষ এবং কৃষি কাজ করা ছিল আমার নিত্য দিনের রুটিন কাজ। এক কথায়-Earning and learning all-at-once.
মাস চারেক পর একদিন সকালের টিউশন শেষে, স্কুলে যাওয়ার জন্য স্টেশনে বাসের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার এক বন্ধু বলল- গতকাল প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করেছে। তোমার খবর কী ?
আমি বললাম, কই! আমি তো জানি না।
তখনো তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার এত উন্নতি সাধিত হয়নি যে, কারো কাছ থেকে মোবাইলে সংবাদ নেব। হকারের কাছ থেকে দুই টাকা দিয়ে একটি “দৈনিক কক্সবাজার” পত্রিকা কিনলাম। চোখ বুলাতেই “প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ” শিরোনাম চোখে পড়ল। আগ্রহের সাথে নিজের রোল নাম্বারটা আছে কিনা, খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু বিধিবাম। বাস চলে আসল। এই বাস মিস করলে অ্যাসেম্বলি ক্লাস মিস হবে। অ্যাসেম্বলি ক্লাস মিস করলে প্রধান শিক্ষক বাবু সুবর্ণ বড়ুয়ার কড়া হুঁশিয়ারী শুনতে হবে “অ্যাবসেন্ট দেব”। অগত্যা ইচ্ছার বিরুদ্ধে পত্রিকাটি গুটিয়ে বাসে উঠে পড়লাম। বাসে কোন সিট খালি নেই। আমি এবং মুকন্দ্র স্যার পাশাপাশি দাঁড়ালাম।
মুকন্দ্র স্যার হলেন-আমার প্রাইমারি স্কুল জীবনের শিক্ষক।পুরো নাম মুকন্দ্র লাল মল্লিক। গণিত পড়াতেন। অত্যন্ত কড়া মেজাজের লোক। ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই পিন পতন নীরবতা নেমে আসত। স্যার যতক্ষণ অংক করাতেন কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করত না। নতুন নতুন নিয়মের গ্যাড়াকলে পড়ে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেজাজ কিছুটা কমেছে। এখন একই স্কুলে শিক্ষকতা করি।
আমার বাল্য বন্ধু খোরশেদও এই স্কুলের এডিবি’র প্রজেক্টের শিক্ষক ছিল (বর্তমানে উখিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক)। ছোট বেলা থেকেই খোরশেদ আর আমি ছিলাম দু’টি দেহের একটি প্রাণ। বছর দুয়েক আগে খোরশেদ এর সাথে আমার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সেই শিশু বেলার আঙ্গুল কেটে আড়ি কাটার মত কথা বলা বন্ধ। প্রতিদিন দেখা হয়, অফিসে এক সাথে বসা হয়, কিন্তু কথা হয় না। মুকন্দ্র স্যারের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে একদিন সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার সামনে বললেন—তুমি আর খোরশেদ ক্লাসমেট ছিলে না? উত্তরে আমি বললাম—জ্বি স্যার।
তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে ? কোন দিন কথা বলতে দেখলাম না যে!
আমি কোন উত্তর দিলাম না, খোরশেদও দিল না।
তখন মুকন্দ্র স্যার বললেন-Two lions can’t stay in a forest.
সাথে সাথে আমি বললাম-One (lion) will be transferred to another forest soon.
‌দুইদিন পর কাকতালীয়ভাবে খোরশেদের পাগলির বিল সরকারি প্রাইমারি স্কুলে বদলী হল। সবাই মনে করল যে, আমি তার বদলী করিয়েছি। আর আমি মনে মনে ভাবি-ঝড়ে বক মরল, আর ফকিরের কেরামতি ফল্ ল।
খোরশেদ পাগলির বিল সরকারি প্রাইমারি স্কুলে যোগদান করে ৪১৫/-টাকা (এক মাসের বেতনের এক চতুর্থাংশ) দিয়ে একটি পুরাতন বাইসাইকেল কিনল। উপজেলা সদর থেকে বাসে মরিচ্যা যেত। মরিচ্যা থেকে সাইকেল চালিয়ে পাগলির বিল সরকারি প্রাইমারি স্কুলে যেত। স্কুল ছুটির পর সাইকেল চালিয়ে মরিচ্যা ফিরে আসত। এক দোকানে সাইকেলটিতে চায়না তালা লাগিয়ে রেখে পুনরায় বাস যোগে বাড়িতে ফিরে আসত।
খোরশেদ যে সাইকেল কিনেছে এটা কারো বিশ্বাস হচ্ছিল না। একদিন আমি আর নেজাম মাস্টার তাকে অনুসরণ করে দেখতে গেলাম। সত্যি সত্যিই সে সাইকেল কিনেছে এবং প্রত্যক্ষ করলাম, দিব্যি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে । সাইকেলটির দুই চাকার উপরে মাডগার্ড (ছাউনি) নেই। প্রতিটি নাট-বল্টুর রং উঠে অদ্ভুত মডেলাকার ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখতে গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া পশমহীন বড়সড় কঙ্কালসার কুকুরের মতো দেখায়। এই সাইকেল কোথা থেকে কিনেছে তা নিয়ে বন্ধু মহলে বেশ বিতর্ক আছে। কেউ বলে, জমিদার পুত্র মৌলভী ফজলুল হক চল্লিশের দশকে যৌতুক হিসেবে যেটি পেয়েছিল, সেটি কিনেছে। আবার কারো মতে, ভাঙ্গারির দোকান থেকে কিনেছে। প্রকৃত পক্ষে সাইকেলটি কোথা থেকে কিনেছিল, সে রহস্যের জাল আজও ভেদ করা সম্ভব হয়নি।
যাত্রীবাহী কক্সবাজার-টেকনাফ লোকাল বাসে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ানো অবস্থায়, মুকুন্দ স্যার জিজ্ঞাসা করলেন-
তোমার রেজাল্টের খবর কি?
-এখনো জানি না, স্যার।
কেন? খবর নিবে না ? উপজেলায় মোট ১২ জন নাকি চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়েছে।
-পেপার একটা কিনেছি, স্যার। এখানে পুরা জেলার নির্বাচিতদের রোল নাম্বার আছে। স্কুলে পৌঁছে পড়ে দেখব।
বাস থেকে নেমে স্কুলে পৌঁছতে না পৌঁছতেই অ্যাসেম্বলি ক্লাসের ঘন্টা বাজল। যথারীতি ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগন জাতীয় পতাকা সামনে রেখে পল ইন হয়ে দাঁড়ালাম । প্রথমে ধর্মীয়গ্রন্থ থেকে পাঠ,তারপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মিলিত সম্মান প্রদর্শন। সবশেষে জাতীয় ধ্বনি। শিক্ষার্থীরা সিঙ্গেল লাইনে শ্রেনি কক্ষে গমনের পর শিক্ষক-শিক্ষিকাগন অফিস রুমে প্রবেশের পালা।
আমি অফিস রুমে প্রবেশের পর পরই পত্রিকার ঐ নিউজটিতে মনোনিবেশ করলাম। আমার রোল নাম্বারটি চোখে পড়তেই পুলকিত হলাম। ছোট হোক প্রথম সরকারি চাকরি। যদিও যেটি করছিলাম, সেটি পরবর্তীতে প্রজেক্ট মেয়াদ শেষে রাজস্বখাতে কনভার্ট হয়েছিল।
প্রথমে মুকুন্দ স্যারকে জানালাম। ১২ জনের মধ্যে আমার রোল নাম্বারটিও আছে। স্যার শুনে খুব খুশি হলেন,যেন আপন ছেলের চাকরি হয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারলাম ১২ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন কোটায়। আমি আর অন্য একজন সাধারণ কোটায়।
স্কুল ছুটির পর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাস্টার আবুল ফজল স্যার (বর্তমানে প্রয়াত) এর কাছ থেকে জানলাম, নির্বাচিত ১২ জনের পদায়নের আদেশ ইস্যু হয়েছে। আমার কোথায় জানতে চাইলে, তিনি বললেন, “ তোমার ব্যাপারে তো জানি না, তুমিতো আগে কিছু বলোনি”। তারপর তিনি একটি ফোন-ফ্যাক্সের দোকান থেকে জেলা শিক্ষা অফিসে ফোন করে জানলেন, আমার পোস্টিং ছেপটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
পোস্টিং এর খবর শুনে সরকারি চাকরি পাওয়ার সুখানুভূতিতে ভাটা পড়ল। ছেপটখালী প্রাইমারি স্কুলটি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। সমুদ্রোপকূলে,দূর্গম এলাকা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। জোয়ার-ভাটার উপর ভরসা করে গমনাগমন করতে হয়। তেইশ বছরের জীবনে বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে দূরে কোথাও থাকা হয়নি। বাড়িতে থাকতে না পারলে মাছ চাষ, ধান চাষ, টিউশন সবই বন্ধ হয়ে যাবে। উপার্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। এই সব ভাবতে ভাবতে সু-সংবাদটা বাবা-মাকে জানানোর স্পৃহা হারিয়ে ফেললাম। সরকারি চাকরি পাওয়ার যে আনন্দ তা নিমিষে বিষাদে পর্যবসিত হলো।
পর দিন যোগদানের টাইম লিমিটসহ নিয়োগপত্র হাতে পেলাম। দেখলাম, আমার বাল্য বন্ধু সহপাঠী আতাহার হোসাইনেরও ছেপটখালী প্রাইমারি স্কুলে পোস্টিং। আমি যোগদান করব কিনা দো-টানায় পড়ে গেলাম। শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই এক বাক্যে যোগদানের পরামর্শ দেন।
কৃষক বাবাকে আমি না বললেও কারো কাছ থেকে শুনে জিজ্ঞেস করলেন,“এখন যেটি করছ সেটিইতো ভালো, কাছে আছে। দিনে দিনে আসা-যাওয়া করা যায়। আবার ছেপটখালী কেন যেতে চাচ্ছ”? বাবাকে বুঝালাম এটি প্রকল্প মেয়াদ পর্যন্ত, প্রকল্প মেয়াদ শেষে সরকারি হতেও পারে, নাও হতে পারে। শুনে বললেন- ভেবে দেখ, কি করবা।
বাড়ির পাশেই উপজেলা পরিষদ। দুইদিন পর শিক্ষা অফিসে গেলাম। অফিস সহকারী মোক্তার মাস্টার বললেন, ‘’আতাহার সাহেব জয়েন্ট করে ফেলেছেন। আপনি রিজাইনও দিচ্ছেন না, আবার নতুনটিতে যোগদানও করছেন না। সময় আছে আর মাত্র ০৪ দিন” ।
আমি বললাম-যোগদান করবো!
তিনি আকস্মিক বিক্ষুব্ধ অবেগে বললেন-“বিনা তদবীরে অর্জনতো, তাই এ কথা। ক্ষমতাবানদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে জুতার তলা ক্ষয় করে, তোষামোদ আর মালপানি খরচ করে পেতে হলে বুঝতেন”।
মোক্তার মাস্টার প্রথম জীবনে রেজিঃ বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী পদে যোগদেন। অফিস সহকারীদেরকে সবাই কেরানি বলে ডাকে। কিন্তু প্রথম জীবনে একটি রেজিঃ বেসরকারি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার সুবাদে, মোক্তার মাস্টারকে সবাই সমীহ করে মাস্টার সাহেব বলে ডাকে। বয়স পঞ্চাশের কোটায়।
মোক্তার মাস্টারের কথা শুনে আমি থ বনে গেলাম।কিছুক্ষণ নিরুত্তর রইলাম। অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত জানালাম। যোগদান করব।
তিনি বললেন-ছেপটখালী গেছেন কখনো?
উত্তরে আমি বললাম-না।
আগামীকাল প্রধান শিক্ষক শরিফ আহম্মদ সাহেব (বর্তমানে প্রয়াত) আসবেন। দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে চলে আসেন। একসাথে যাবেন।
-আচ্ছা, চলে আসব।
আগে বর্তমান পদ থেকে রিজাইন দেন।
-ঠিক আছে, বলেই আমি একটি পদত্যাগপত্র লিখে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
পরের দিন বাবা-মাকে জানিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে দুপুর ঠিক দুইটায় শিক্ষা অফিসে এসে হাজির হলাম। মোক্তার মাস্টার প্রধান শিক্ষক জনাব শরিফ আহাম্মদ সাহেব এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অফিসে একটি যোগদানপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে রওয়ানা হলাম। প্রথমে বেবিট্যাক্সি যোগে কোটবাজার। কোট বাজার থেকে মনখালী পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে চান্দের গাড়ি (জীপগাড়ি) ছাড়ত। আজকের ভাটার সময়ের হিসেবে প্রথম গাড়ি ছাড়বে বিকাল তিনটায়। প্রধান শিক্ষক সাহেবের হিসেব মেলানো ছিল। সেই মোতাবেক তিনটার আগেই কোটবাজার এসে পৌঁছা।
চান্দের গাড়ির চালকের পাশের একটি সিট (ফ্রন্ট সিট) প্রধান শিক্ষকের জন্য বুক করা ছিল।পাশে আরো একজন সম্ভ্রান্ত বয়স্ক লোক বসা। গ্লাসের সামনে ইঞ্জিনের ঢাকনার উপর তিন জন এমন ভাবে বসলেন, চালক সামনের বাঁ পাশ দেখবে না। ভিতরে দুই পাশের মুখোমুখি সিটে ছয়জন করে বারো জন জড়সড় করে বসা। দুই সিটের মাঝখানে ছাউনি পর্যন্ত ইউরিয়া সার ভর্তি বস্তার স্তুপ। মুখোমুখি সিট হলেও সারের বস্তার স্তুপের কারণে একপাশের যাত্রী অপর পাশের যাত্রীদের দেখে না। গাড়ির ছাদের উপর হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকানে শিশি রাখার মত, ঠাসাঠাসি করে বসা জনা দশেক লোকের মাথা দেখা যাচ্ছে। পিছনে নিচু ফাইল করা দুইটি সারের বস্তার উপর পেপার বিছিয়ে দুইজন বসা। পিছনে পাঁচ/ছয় জন রড ধরে বাদুর ঝুলা হয়ে ঝুলে দাঁড়ানো।
কোথায় বসব, কোথায় দাড়াব, ভেবে রীতিমত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সামনে বসা প্রধান শিক্ষক সাহেব কে বললাম, বসার বা দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। তিনি ড্রাইভারকে বলে আমার বসার ব্যবস্থা করলেন। পিছনে সারের বস্তা থেকে একজনকে উঠিয়ে আমাকে বসতে দিলেন। যাক, নতুন মাস্টারকে ইজ্জত দিলো। আমি সারের বস্তায় বসে দুই হাঁটুর উপর ব্যাগটা রাখলাম। উঠে যাওয়া ব্যক্তির পেপারটা ছিল বলে বসতে তেমন অসুবিধা হয়নি। আমি বসার পর গাড়ি ছাড়ল। কোটবাজার থেকে ইনানী পর্যন্ত প্রায় পনেরো কিলোমিটার। চালক বেশ সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে গাড়ি চালালেন। ইঞ্জিনের ঢাকনায় বসার কারণে চলন্ত অবস্থায় চালক সামনের বাঁ পাশের কিছু দেখতে পাচ্ছে না। ভিতরের যাত্রীদের অগ্র পশ্চাৎ দেখার কোন সুযোগ নেই। ইনানীর পর আর রাস্তা নেই।এবার সমুদ্রে নামতে হবে।
আরব্য রজনীর রুপকথার গল্পের সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র যাত্রা নয়। কিংবা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি কপালকুণ্ডলার নবকুমারের সমুদ্র দর্শনও নয়। একজন আপাদমস্তক বাঙ্গালি যুবকের জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অন্যরকম এক বাস্তব যাত্রার কাহিনী সম্মানিত পাঠককুলের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার দুঃসাধ্য চেষ্টা করছি । যার নির্যাস আস্বাদনে, কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যাবে, তৎকালীন শিক্ষক সমাজের জীবন যাত্রার আসল চিত্র।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট হচ্ছে- ইনানী সি- বিচ। পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমায়। পর্যটকরা সমুদ্রের বিশুদ্ধ সমীরণ গায়ে মেখে প্রাণ জুড়ায়। সমুদ্র তীরের বালুকারাশির উপর খন্ড খন্ড প্রাকৃতিক পাথরের স্তুপ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ায়। পড়ন্ত বিকেলে আগত পর্যটকরা সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মিতালি করে ভাব জমায়। উপভোগ করে অস্তগত সূর্যের রক্তিম রশ্মি আর সমুদ্রের অনন্ত জলরাশি গগনে মিশে থাকার দৃশ্য। ……... (চলবে)
লেখক-
অফিসার ইনচার্জ
লালমাই থানা, কুমিল্লা।