জহিরুল ইসলাম জহির ।। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও অরক্ষিত ও অবহেলায় পড়ে আছে লালমাই উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র চিহৃ হাড়াতলি স্মৃতিফলক। বাঁশঝাড় আর জঙ্গলে ঢেকে গেছে স্মৃতিফলকটি। ১৯৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার নিজ অর্থায়নে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছিলেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলের তত্বাবধানে নির্মিত স্মৃতিফলকটির সংরক্ষনে পরবর্তীতে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে স্মৃতিফলকের সংস্কার করা হয়নি। ইতিমধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাটাও মুছে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকবছর পর স্মৃতিচিহৃটিও বিলীন হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের এই আঞ্চলিক ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে না। বরং ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা রয়েছে।
হাড়াতলি যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক, গোলাম মোস্তফা, লেয়াকত ও রুস্তম আলীর দাবী, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে জীবন্ত করে রাখতে হবে। সরকারি উদ্যোগে হাড়াতলির যুদ্ধ চিহৃটির সংরক্ষন ও শহীদদের স্মরনে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হউক।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর দুপুরে লালমাই (সাবেক লাকসাম) উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের হাড়াতলিতে ৩৪জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় খবর আসে পাকবাহিনীর শতাধিক সৈন্য গৈয়ারভাঙ্গা হয়ে উত্তর দিকে আসতেছে। বিষয়টি পার্শ্ববর্তী গ্রাম হোসেনপুরে অবস্থানরত ক্যাপ্টেন মাহবুব কে জানানো হলে তিনি পাক সেনাদের আক্রমনের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমান্ডার জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যান। একটি গ্রুপ হাড়াতলি বাঁকে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাক সেনারা সেখানে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালায়। পাক সেনারা চানমইল্যা জলায় অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমন করে। শুরু হয় যুদ্ধ। গুলি, পাল্টা গুলি। অনুমান এক ঘন্টা পর ক্যাপ্টেন মাহবুব ও দুতিয়াপুরের হাবিলদার মোতালেব পরতি গ্রামে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। দুপুর থেকে একটানা বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান আলফু, হারুনুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেন, মনোরঞ্জন সিংহ ও ইজ্জত আলী (জিন্নত আলী) শহীদ হন। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন দু’জন পথচারীও নিহত হয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে।